বাড়ির ভেতরে সুতার কারখানা, অবৈধ গ্যাস লাইনের কারণেই বয়লার বিস্ফোরণ

চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ৮ মাস ধরে বন্ধ ছিল খোরশেদ ডাইং অ্যান্ড থ্রেড নামের একটি সুতার কারখানা। কারখানাটি বাড়ির ভেতর হলেও এর নামে কোন বৈধ গ্যাস সংযোগ ছিল না। সম্প্রতি গ্যাস পাইপ লাইনের লিকেজ থেকে ওই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় এতে কোনো হতাহত না হলেও রাতে বয়লার বিস্ফোরিত হওয়ায় পুরো এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

সূত্র বলছে, খোরশেদসহ কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছিল খোরশেদ ডাইং অ্যান্ড থ্রেড কারখানাটি। ওই কারখানায় পরিবেশ দূষণরোধে ব্যবহার করা হয়নি ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি)। নেই পরিবেশের ছাত্রপত্রও। তাদের বৈধ কোনো গ্যাস সংযোগও ছিল না। সেখানে বাণিজ্যিক লাইনের অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে ফ্যাক্টরিতে লাইন সরবরাহ করে আসছিল। জমানো গ্যাস থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটে।

কেজিডিসিএল বলছে, বিস্ফোরণের খরব পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে অবৈধ গ্যাস লাইনটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত চলমান রয়েছে।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বব রাত সোয়া ১ টার দিকে আবুল ফ্যাক্টরি প্রধান অফিসের পাশে একটি বাড়ির ভেতরে বয়লার বিষ্ফোরণের ঘটে। ওই সময় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পুরো কারখানাটি। ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, কেউ জানতো না এখানে একটি এতবড় কারখানা রয়েছে। তাও বাড়ির ভেতরে। ঘটনার দিন মধ্যরাতে হঠাৎ বিকট শব্দে পুরো এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ছোটাছুটি করতে গিয়ে কয়েকজন আহতও হয়েছেন। খরব পেয়ে রাত ২ টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসেন। তবে ঘটনার পর মালিককে খোঁজে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ডাইং অ্যান্ড থ্রেড ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী মো. খোরশেদ বলেন, ‘আমার কারখানাটিতে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন রয়েছে। আপনি চাইলে কাগজপত্র দেখাতে পারব। গ্যাস লাইন থেকে বিস্ফোরণ হয়নি। বয়লার বিস্ফোরণ হলেও আশাপাশের কেউই হতাহত হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার আগে থেকে কারখানাটি বন্ধ ছিল। বাড়ির মালিকের অনুমোদন রয়েছে। ওই বাড়ির নিচ তলায় কারখানাটি পরিচালনা করে আসছিলাম।’

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সোয়া ১ টার দিকে সুতার কারখানার বয়লার বিস্ফোরনের খবর পেয়ে সেখানে দুটি গাড়ি পাঠানো হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে পুরো এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কারখানার কাগজপত্রসহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন ধরনের অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পরই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। করোনার আগে প্রায় ৮ মাস ধরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাটিতে সুতার ডাইং করা হতে। ধারণা করছি- গ্যাস লিকেজ থেকে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের মালিক পতালক রয়েছে।’

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস) সায়োরার হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর ওইদিন সরেজমিনে গিয়ে কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাদের কারখানার ভেতরে গ্যাস লাইনের কোনো অনুমতি ছিল না। গোপনে কমার্শিয়াল গ্যাস পাইপ লাইন থেকে কারখানায় গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ লাইন থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!