বালুখেকো চক্র, হুমকির মুখে হালদার ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প

ইচ্ছেমতো মাটি ও বালি উত্তোলন চলছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার পাড়ে। একটি চক্র অবৈধভাবে হালদার দু’পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর গতি ও প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে এসব অবৈধ বালুখেকোর বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের দমানো যাচ্ছে না। মাটি কাটার বিষয় স্বীকার করে প্রশাসন বলছে, ‘যে মাটি কাটা হচ্ছে তা হালদা বেড়িবাঁধের জন্য কাটা হচ্ছে।’

জানা গেছে, হালদা নদীর ফটিকছড়ি উপজেলা অংশে চলছে মাটি ও বালি উত্তোলনের মহোৎসব। ফটিকছড়ি ও ভূজপুর এলাকায় একটি ড্রাম ট্রাক মাটি ও বালি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। সর্বদলীয় একটি চক্র নির্বিচারে রাতদিন বালি উত্তোলন করছে। নদীর পাড় ও চর কেটে সড়ক নির্মাণ, বাড়ি ঘর নির্মাণসহ নানান কাজে এসব মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রতি ট্রাক মাটি ও বালি ৩-৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দৈনিক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই এই সিন্ডিকেট। ভূজপুর রাবার ড্যামের নিচে (দক্ষিণে) এক মাস ধরে নির্বিচারে নদীর ধার, চর ও পাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে চক্রটি। তবে বালি উত্তোলন, নদীর পার ও চার কেটে নদীর গতি ও প্রকৃতি হুমকিতে ফেললেও নীরব স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও থেমে নেই এসব কর্মকাণ্ড।

এ বিষয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল আরেফিন বলেন, ‘হালদা থেকে যে কোন ধরণের বালি উত্তোলন ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছি। গতমাসেও অভিযান চালিয়ে ৮ লাখ টাকা জরিমানা ও দুইজনকে কারাদণ্ড দিয়েছি। যে মাটি কাটা হচ্ছে তা হালদা বেড়িবাঁধের জন্য কাটা হচ্ছে।’

জানা গেছে, পাইন্দং ইউনিয়নের যুগিনী ঘাটা, ফকিরা চান, সুন্দরপুরের ছোট ছিলোনিয়া, এক্কুলিয়া, পাঁচ পুকুরিয়া, সুয়াবিলের সিদ্ধাশ্রমের আশপাশ, বারমাসিয়া ঘাট, নাইচ্চের ঘাট, আজিমপুর ঘাট, নাজিরহাট পৌরসভার কুম্ভার পাড়, নারায়ণহাট ইউনিয়নের কুয়ারপাড়া, হাপানিয়া, পিলখানা, বারমাসিয়া খালের মাথা, মির্জারহাট এলাকা থেকে জিপ, ট্রাক, ট্রলি ভরে বালি ও মাটি পাচার করছে।

এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে হালদা নদীর মৎস্য ক্ষেত্র, ভূজপুর রাবার ড্যাম, হালদা নদীর ভাঙ্গন রোধে সিসি ব্লক স্থাপন ও ভেড়িবাঁধ স্থাপনের ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হালদা নদীর বালি মাটি পাচারকারীরা শক্তিশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের বাধা দেওয়ার সাহস পায় না। বাধা দিলে জীবন নাশের হুমকি সহ মামলা হামলার ভয় দেখায়। চক্রটি স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাটি ও বালি পাচার করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। বালি ও মাটি বহনকারী ট্রাক আসা যাওয়ার শব্দে এলাকাবাসীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘সরকার যখন হালদা নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তখন এভাবে নদীর পাড় ও চর কেটে নেওয়া মুলত নদীর গতি ও পাড় রক্ষায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাধাগ্রস্থ হবে। হালদাকে বাঁচাতে হলে নদী থেকে বালি উত্তোলন, চর ও পাড় কেটে পাচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

স্থানীয় পরিবেশ কর্মী সোলাইমান আকাশ বলেন, হালদার উন্নয়নে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হলেও বাস্তবে তার কোন কার্যক্রম নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালালেও থেমে নেই বালি ও মাটি পাচার। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মা-মাছ রক্ষায় এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!