বারোমাসি টমেটো চাষে সাড়া ফেলেছে পটিয়ায়

বছরব্যাপী টমেটোর চাহিদা থাকলেও এক সময় আবহাওয়ার কারণে শুধু শীতকালেই এ সবজি চাষ হতো। কিন্তু কৃষি বিজ্ঞানীদের সফলতায় এখন ১২ মাসই টমেটোর চাষ হচ্ছে। ফলে প্রিয় সবজিটি এখন মিলছে সারা বছরই।

১২ মাস চাষ হওয়ায় সবজিটির উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ভোক্তাদের চাহিদা যেমন মিটছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। গ্রীষ্মকালে টমেটোর চাষ স্বাবলম্বী হচ্ছেন টমোটো চাষীরাও।

আবুল হোসেন নামে পটিয়া পৌর সদরের পাইকপাড়া এলাকার এক কৃষকের বসতভিটে ছাড়া একখন্ড জমি নেই। তাই ১৫ শতক জমি লিজ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আর পরিশ্রমী আবুল হোসেন নেমে পড়েন ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে। মাছ চাষ, ধান চাষের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেই বদলে গেছে তার জীবন। দিনে এনে দিনে খাওয়া এ কৃষক পরিবারটি এখন আগের তুলনায় বেশ স্বচ্ছল।

কৃষক আবুল হোসেনের আগ্রহ দেখে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জু রাণী পাল তাকে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করার পরামর্শ দেন। বাড়ির পাশেই স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ শতক জমি লিজ নিয়ে টমেটো চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম চাষেই ভালো ফলন ও দাম পেতে শুরু করেন আবুল হোসেন।

জানা গেছে, কৃষি অফিসের উৎসাহ ও সহযোগিতা নিয়ে চলতি বছরের জুন মাসের দিকে টমেটোর আবাদ শুরু করেছেন। এখন তার মুখে হাসির ঝিলিক। দাম ভালো পেয়ে তার মধ্যে উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে টমেটো পাওয়া যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান জানান, গ্রীষ্মকালে মূলত দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে টমেটোর চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু ওই টমেটোতে ফরমালিনসহ নানা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে দেশে গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষক আবুল হোসেনের ক্ষেতে উচ্চ ফলনশীল বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ এর চাষ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে কৃষি বিভাগ থেকে নানা প্রণোদনাসহ সব সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

কৃষক আবুল হোসেন জানান, এই প্রথম বারি ৮ জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের পাশাপাশি অন্যান্য মৌসুমী সবজি চাষ করে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেয়েছেন। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন, ছোট ছেলে পটিয়া সরকারি কলেজে পড়াশুনা করছেন। এসবই সম্ভব হয়েছে মৌসুমী চাষের আয় থেকে।

তিনি আরও জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো কেজিপ্রতি ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এছাড়া সব সময়ই এ টমেটোর চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যায়। আমার চাষাবাদ দেখে গ্রামের অনেকেই এই টমেটো চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমার ১৫ শতক জমিতে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত আমি ৫০ কেজি টমেটো বিক্রি করেছি। দামও ভালো পাচ্ছি। তবে এ টমেটো চাষের সফলতার পেছনে পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহায়তার কথা স্বীকার করেন তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এ কেন্দ্রের সবজি বিভাগের বিজ্ঞানীদের নিরলস প্রচেষ্টায় ১৯৯৬ সালে প্রথম উচ্চতাপ সহিষ্ণু বারি টমেটো-৪ ও বারি টমেটো-৫ নামে দু’টি জাত অবমুক্ত হয়। এ দু’টি জাতের টমেটোতে লাভজনক ফলনের জন্য কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজন হতো। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা ১৯৯৮ সালে হরমোন প্রয়োগ ছাড়াই লাভজনক ফলন দিতে সক্ষম এমন দু’টি হাইব্রিড জাতের গ্রীষ্মকালীন টমেটো (বারি টমেটো-১০ অনুপমা) ও বারি টমেটো-১৩ শ্রাবণী) উদ্ভাবন করেন। কিন্তু এই দু’টি হাইব্রিড জাতের টমেটোর আকার খুবই ছোট (গড়ে ২৫ গ্রাম) হয়।

সবশেষে উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল বারি হাইব্রিড টমেটো-৩ ও বারি হাইব্রিড টমেটো-৪ নামের দু’টি জাত আবিষ্কার করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। এরপর বানিজ্যিকভাবে লাভজনক ফলন পেতে থাকেন টমেটো চাষীরা।

এছাড়া সম্প্রতি গ্রীষ্মকালে চাষ উপযোগী বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ নামে আরও একটি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। যা টমেটোর আগের জাতগুলোর তুলনায় আকারে বড় ও ফলন বেশি। বর্তমানে বারি -৩, ৪ ও ৮ এই তিন জাতের টমেটো চাষ করছেন চাষীরা।

গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বিভিন্ন জাত নিয়ে কাজ করছেন পটিয়া কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জু রাণী পাল।

তিনি জানান, গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো খুবই সম্ভবনাময় অর্থকরী ফসল। স্বল্প সময়ে উচ্চমূল্যে টমেটো চাষ করে আবুল হোসেনের মতো অন্য কৃষকদেরও ভাগ্য বদল সম্ভব। সাধারণত এ মৌসুমে টমেটোর দাম বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকার ফলে আলাদা আলাদা শেড তৈরি করে এবং পোকা মাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য হলুদ ফাঁদ তৈরি করতে হয়। এছাড়াও জৈব বার্মি কম্পোজ সার ব্যবহার করতে হয়।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!