বাবুনগরীকে জামায়াতের ‘এজেন্ট’ বললেন আল্লামা শফীপুত্র আনাস

বাবুনগরী বললেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

এবার দেশের আলোচিত ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে জামায়াতের এজেন্ট বললেন সংগঠনটির আমীর শাহ আহমদ শফীর পুত্র আনাস মাদানী। তবে বিষয়টিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

সম্প্রতি ফাঁস হওয়া শফীপুত্র আনাস মাদানী ও অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ফোনালাপে শফীপুত্র এমন দাবি করেন। ফোনালাপে বাবুনগরী জামায়াতের এজেন্ট হওয়ার বিষয়ে তার কাছে ডকুমেন্ট আছে বলেও দাবি করেন শফীপুত্র।

সেই ফোনালাপ পাঠকের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

অজ্ঞাত ব্যক্তি : আনাস মাদানী সাহেব আমরা তো আপনার ভক্ত। এখন যে আপনার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সমালোচনা শুনতেছি, এগুলো একটু এজাহাত (ব্যাখ্যা) করলে ভালো হয়।

আনাস মাদানী : এজাহাত ভাই কয়টা করব? আমার তো আব্বাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়, আব্বা অসুস্থ। সবগুলো যদি এজাহাত করতে যাই, তাহলে তো আমাকে আর কাজ করতে হবে না।

এ সময় ওই ব্যক্তি অনুরোধ করেন, যেন আনাস মাদানী একবার লাইভে এসে সব বিষয় পরিষ্কার করেন।

জবাবে আনাস মাদানী বলেন : ঠিক আছে, আমি একবার আসলাম। এর পরদিন তারা আসবে, আমাকে এর পরদিন আবারও আসতে হবে। এভাবে তো সিলসিলা জারি হয়ে যাবে। জাহেলদের জবাব দেব কী জন্য? আমি আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতেছি।

অজ্ঞাত ব্যক্তি : এখন তো পুরো বাংলাদেশ, পুরো কওমি অঙ্গন এ বিষয়গুলো নিয়ে আপনার সমালোচনা করছেন। প্লিজ, আমরা কাদেরকে এখন আকাবির (পথ প্রদর্শক) বলব? কাদের এখন অনুসরণ করব?

জবাবে আনাস মাদানী বলেন : আপনাদের আকাবির যারা ছিল তারা এখনও বহাল আছে। তাদেরকে মানতে পারবেন, এদের মধ্যে এখনও কোনো ঘাপলা আসে নাই।

অজ্ঞাত ব্যক্তি : মানুষ আমাদেরকে হাসির পাত্র বানাইতেছে, প্লিজ আমাদের রক্ষা করেন।

এ সময় কিছুটা উত্তেজিতভাবে আনাস মাদানী বলেন : এসব আমরা করতেছি না, বাবুনগরী করতেছে। বাবুনগরী জামায়াতের সঙ্গে কাজ করতেছে। ওনার সঙ্গে আপনারা মত বিনিময় করেন।

অজ্ঞাত ব্যক্তি : বাবুনগরী সাহেবকে পুরো বাংলাদেশে আমরা যা দেখলাম, উনিতো সব সময় বাতিলের বিরুদ্ধে কথা বলেন।

জবাবে আনাস মাদানী বলেন : হ্যাঁ, সব সময় বাতিলের বিরুদ্ধে কথা বলেন। সব সময় জামায়াতের সঙ্গে মিলে কাজ করেন। শাপলা চত্বরে জামায়াতের সঙ্গে মিলে মাইরটা খাওয়াইছে। ডকুমেন্ট আছে তো।

এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ডকুমেন্ট থাকলে পেশ করেন, তাহলে আমরা বাবুনগরী বয়কট করব।

জবাবে আনাস মাদানী বলেন : ঠিক আছে, সময় আসলে পেশ করব।

এদিকে শফীপুত্র আনাসের এমন দাবিকে ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।

বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী ইনামুল হাসান ফারুকি।

তিনি বলেন, বিষয়টি ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেছেন আমাদের হুজুর। এ বিষয়ে তিনি (বাবুনগরী) বুধবার (১ জুলাই) বিকেলে গণমাধ্যমে বিস্তারিত বিবৃতি দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্রও সম্পর্ক নেই। অতীত-বর্তমানে কোনো সময়ই জামায়াতের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল না; বরং পুরো জীবন আমার লেখালেখিতে ও লাখ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশে বয়ান-বক্তৃতার মধ্যে জামায়াতের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে আমি দেশবাসীকে সচেতন করে আসছি।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আমার সম্পর্কে সে (আনাস মাদানী) যা বলেছে, সেটা তার পরিকল্পিত মিথ্যাচার। তার এহেন মিথ্যাচার আমাকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে আমি মনে করি। এগুলো আমার মানহানি করার অপচেষ্টা।’

বাবুনগরী বলেন, ‘কিছুদিন থেকে আমি লক্ষ্য করছি যে, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি মহলের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং সাজানো কথা রটিয়ে, উস্কানিমূলকভাবে সরকার এবং প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এসবের নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার নেই।’

তিনি বলেন, ‘মাওলানা আনাস মাদানী ফোনালাপে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের মর্মান্তিক ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। সে শাপলা চত্বরের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে এমন ডাহা মিথ্যা কথা বলতে পারবে, তা আমি আশা করিনি। অথচ জেলে গেলাম আমি, রক্ত দিলাম আমি। রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করলাম আমি। সেই রাতে হেফাজতের সমাবেশে কী হয়েছিল তা জাতি জানে, কিন্তু মামলার আসামি হলাম আমি।’

তবে এ বিষয়ে জানতে আনাস মাদানীর মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, হেফাজতের আমীর ও মহাসচিবের মধ্যকার বিরোধ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মুঈনে মুহতাতীমের পদ থেকে সরিয়ে দিলে এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।

এমআইটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!