বাবার ভূমিকা নিয়ে পপির বিয়ে দিলেন এক পুলিশসদস্য

নববিবাহিতা পপি আক্তার বললেন, সেই ছোট থেকেই আঙ্কেল (জহিরুল হক ভূঁইয়া) পাশে থেকেছেন। বিয়ের পরদিনের সকালের প্রথম ফোনকলটা আমি আঙ্কেলকেই করেছি। বাবার মত দায়িত্বশীল হয়ে তিনি আমার বিয়ে দিয়েছেন।

বিয়েতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। যার সবটুকুই জোগান দিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া।

অথচ দিনমজুর বাবুল মিয়া জানতেনই না তার জীবন কীভাবে চলবে? অনিশ্চিত জীবনের পথেই চলছিলেন!

বাবার ভূমিকা নিয়ে পপির বিয়ে দিলেন এক পুলিশসদস্য 1

গল্পের শুরুটা ছিল প্রায় একযুগ আগে। দরিদ্র বাবুল মিয়া স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে থাকতে এসেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকার ঝুপড়িতে। সেই ঝুপড়িটিতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া।

জানা যায়, বাবুল মিয়ার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন। ছেলে মারা যাওয়ার পরেই তিনি (বাবুল মিয়ার স্ত্রী) মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। এমন কঠিন সময়ে দীর্ঘদিন বাবুল মিয়ার পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছিলেন জহিরুল হক ভূঁইয়া।

বাবার ভূমিকা নিয়ে পপির বিয়ে দিলেন এক পুলিশসদস্য 2

এই পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বাবুল মিয়ার কন্যা পপি আক্তার (১৮)।

পরে বাবার ভূমিকা নিয়ে পপিকে পাত্রস্থ করার উদ্যোগ নেন জহিরুল হক ভূঁইয়া।

৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পাশে চতুর্থ কর্মচারী সমিতির কার্যালয়ে পপির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ।

পাত্র ঠিক করা হয় বোয়ালখালী উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জসিমকে (২৫)। তিনি পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়নের মৃত সাবের আহমদের ছেলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, তখন মাত্র পাঁচ দিন বাকি, বিয়ের কাজে হাত দিয়ে দিলাম। আমার পকেটে এক পয়সাও ছিল না। কিন্তু চট্টগ্রামের রীতি অনুযায়ী অন্য দশটা বিয়ের মতই পপির বিয়ে দিয়েছি। পপির ইচ্ছে ছিল বিয়েতে একটা সুন্দর গেইট হবে। তার সেই ইচ্ছাটাও পুরণ করেছি।

বাবার ভূমিকা নিয়ে পপির বিয়ে দিলেন এক পুলিশসদস্য 3

তিনি আরও বলেন, ‘ভালো কাজে উদ্যোগী হলে ভালো মানুষের অভাব হয় না। আমার বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় কত সুন্দরভাবে বিয়েটা হলো।’

পপির স্বামী জসিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, স্ত্রী পপিকে নিয়ে তিনি খুব ভালো আছেন এবং দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

বিয়েতে শতাধিক মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়। সিএমপির উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক, এডিসি মিজানুর রহমান, পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার দেবদূত মজুমদার, চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুসহ চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জহিরুল হক বলেন, ‘আমার কাছে বড় প্রাপ্তি এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে মেয়েটিকে নিজের মেয়ের মতো করে চোখে চোখে রেখেছি। বাবার মতন দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে দিতে পেরে খুশি।’

জানা গেছে, বিয়ের পর মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে বাবুল মিয়াকে পাঠিয়েছেন এই পুলিশ পরিদর্শক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!