‘বাবাকে বলে দিবো’— কথাটাই কাল হলো ফাতেমার!

সকালে মারা যাওয়ার আগে রাতে হয়ত মাকে জড়িয়েই ঘুমিয়ে ছিল ফাতেমা। রাত জেগে বারবার হয়তো মাকেই খুঁজেছিল। হয়তো গভীর রাতে ছোট্ট ফাতেমাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়েছিল মা। চার বছরের কন্যা যে বুঝিয়ে কথা বলার ক্ষমতা নেই। যার মুখ দিয়ে এখনো ভাল করে কথাও বের হয় না।শিশু ফাতেমা শুধু বলেছিল ‘বাবাকে বলে দিবো’। এই কথাটাই চার বছরের শিশু ফাতেমার জন্য কাল হলো!

পুলিশকে দেওয়া মা হাসিনার স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে নিজের মেয়ে আর স্বামীকে খুন করার মর্মস্পর্শী তথ্য। ছোট্ট মেয়ে ফাতেমা মায়ের জন্য দোকান থেওকে রুটি নিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখতে পায় মা আর পাশের বাসার আংকেলকে। ছোট্ট ফাতেমার চোখে সেটি ভালো লাগেনি। সে বলেছিলো, ‘ বাবাকে বলে দিবো’ এরই পরিপ্রেক্ষিতে মায়ের হাতে খুন হতে হলো ছোট্ট ফাতেমাকে।

এ ঘটনায় পুলিশ হাসিনা আর মাইউদ্দিন নামের ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

হাসিনা ও মাঈনুদ্দীন বিকালে চট্টগ্রামের আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করলে জানা যায়, শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাহের ও ফাতেমা নাস্তা করতে দোকানে গেলে মাইনুদ্দীনের ও হাসিনা শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হন। দোকান থেকে ফিরে এসে শিশু ফাতেমা দেখে ফেলে এবং বাবাকে বলে দেওয়ার কথা বলে। এ সময় হাসিনা হঠাৎ করেই ফাতেমার হাত-পা চেপে ধরে আর মইনুউদ্দিন ছুরি দিয়ে হত্যা করে লাশ খাটের উপর রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। কিছুক্ষণ পর তাহের বাসায় প্রবেশ করলে মাইনুদ্দীন ও হাসিনা তাকে জাপটে ধরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে। এ সময় তাকে পেটে ও মাথায় ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি গলা কেটে দেয়।

স্বীকারোক্তিতে হাসিনা জানিয়েছেন, মাইনুদ্দীনের সঙ্গে সম্পর্কের দৃশ্য শিশু ফাতেমা দেখে ফেলার পর মাইনুদ্দীন বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা বললেও হাসিনাই মেয়েকে মেরে ফেলার কথা বলেন এবং নিজে খুন করে।

এ বিষয়ে পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, হাসিনার সঙ্গে তার আগের স্বামীর বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এদিকে তাহেরের স্ত্রী মারা যান। ৫ বছর আগে পারিবারিকভাবে তাহের ও হাসিনার বিয়ে হয়। তাহের দিনমজুর। তাদের বাসার পাশে একটি কক্ষে থাকতেন মাইনুদ্দিন। তিনি শ্রমিক সরবরাহকারী। পাশাপাশি থাকার কারণে হাসিনা ও মাইনুদ্দিনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম রোবববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য হাসিনা পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে মেয়েকে খুন করে স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি পুরো ঘটনা স্বীকার করেন। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নোয়াখালী থেকে মাইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, কতটা হিংস্র হলে নিজের গর্ভের সন্তানকে এমন নৃশংসভাবে খুন করতে পারে। মায়ের কোলেও শিশু নিরাপদ না। এমন নৃশংসতাও আমাদের দেখতে হলো!

আমেনা বেগম আরও বলেন, আসামিরা স্বীকার করেছেন যে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক আছে। চার বছরের শিশু ফাতেমা তার বাবাকে এটা বলে দেবে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে মাইনুদ্দিন শিশুটির হাত-পা চেপে ধরেন আর হাসিনা ছুরি দিয়ে মেয়েকে হত্যা করেন। পরে লাশটি খাটের ওপর রেখে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন। এই ঘটনার পর বাসায় আসেন তাহের। তৎক্ষণাৎ তাকেও জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। তাকেও রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।

মামলার বাদি ও নিহত তাহেরের বড় ভাই নুর আলম বলেন, তাহের ও হাসিনার মধ্যে বেশ কয়েদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। তবে এমন পরিস্থিতি হবে জানতাম না। অনৈতিক সম্পর্কের কারণে আর কোনো স্বামী-সন্তানকে যেন প্রাণ হারাতে না হয়। তিনি দুজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

প্রসংগত, শনিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার নিমতলার বুচুইক্কা কলোনির একটি বাসা থেকে বাবা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত তাহেরের বড় ভাই নুর আলম বাদি হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দিন পুলিশ হাসিনাকে আটক করে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নোয়াখালী থেকে পরকীয়া প্রেমিক মাইনুদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!