বান্দরবানে বৌদ্ধ বিহারে ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যা, নিন্দা ও প্রতিবাদ

 

রাজীব সেন প্রিন্স :::

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

 

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহারে ঢুকে এ ভিক্ষুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

ওই বৌদ্ধ ভিক্ষুর নাম উ দেমা উয়াছা (৭৮)। তিনি নাইক্ষংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরবর্তী বাইশারি থানার উপর চাকপাড়া গ্রামের চাক নির্বাণ বৌদ্ধ ক্যাংয়ের প্রধান ভিক্ষু বা ভান্তে ছিলেন।  তিনি দু বছর আগে ওই ক্যাংয়ের ভান্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে উ দেমা উয়াছা নাম গ্রহণ করেন। তার আগে তার নাম ছিল মং সই উ চাক।

 

ban001122_12875_1463209600

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, পূর্ব চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারের ভেতর থেকে ভিক্ষুর লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে আজ সকালে ওই ভিক্ষুর পুত্রবধূ তার জন্য খাবার নিয়ে গিয়ে ক্যাংয়ের ভিতরে ভিক্ষুর মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল লিপিবদ্ধ এবং পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে ঘটনাস্থলে বিজিবি সদস্যরা উপস্থিত আছেন বলে জানায় পুলিশ।
তবে গ্রামবাসীরা বলছেন, উপর চাকপাড়া মূলত পাহাড়ি সংখ্যালঘু চাক সম্প্রদায়ের আবাস। নিহত ভিক্ষু সারাক্ষণই চাকপাড়া ক্যাংয়ের ভেতরে অবস্থান করে প্রার্থনা করতেন। উ দেমা উয়াছার কোন শত্রু ছিল না। তিনি নিজের মতোই থাকতেন। কারো সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। দুবছর আগে ভান্তের দায়িত্ব নেবার আগ পর্যন্ত তিনি কৃষিকাজ করতেন। কে বা কারা এ হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে বা কেন করেছে তা রহস্যময় মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।
তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, তাকে গত রাত আটটা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে কোনো এক সময়ে হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তার ঘাড়ে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের দাগ রয়েছে। গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে তার সাথে কারো ব্যক্তিগত রেষারেষি ছিল না যার কারণে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
বিবিসি সূত্র বলছে, বাংলাদেশে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষকে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এর আগে হিন্দু সাধু, খ্রিস্টান পাদ্রি, নাস্তিক ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পুস্তক প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক, সমকামী অধিকার কর্মীরা খুন হয়েছে বাংলাদেশে। সবাইকেই গলায় কিংবা মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে দেশী কিংবা বিদেশী জঙ্গি গোষ্ঠির তরফ থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করা হয়েছে। নাইক্ষংছড়ির এই ভিক্ষু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও এসব হত্যার ধারাবাহিকতা কিনা সেটা এখন স্পষ্ট না।

এদিকে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন পার্বত্য জেলা ভিক্ষু কল্যাণ পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও মঞ্চনাট্যকর্মী মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। এর দুদিন আগে ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে তাঁর শালবাগানের বাসার কাছে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর এক দিন আগে ২২ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পরমানন্দ রায় নামের এক সাধু ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!