বান্দরবানে ট্রেনিং নিচ্ছিল আনসার আল ইসলামের ঘরপালানো ৩৩ জঙ্গি!

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে রীতিমতো ক্যাম্প বানিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ৩৩ জন জঙ্গি। এর আগে তারা সুন্দরবনে নিয়েছিল শারীরিক প্রশিক্ষণ। অর্থ সংগ্রহের জন্য এই গ্রুপের দলনেতা শাহীন আলম ওরফে ওমর শরীফ এবং তার দুই সহযোগী হানিফুজ্জামান তারেক ও সাইফুল ইসলাম বান্দরবান থেকে ঢাকায় গেলে সেখানে তারা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের জালে ধরা পড়ে। এরপরই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনটির সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে জানতে পারে কাউন্টার টেরোরিজম কমর্কর্তারা।

গত ১০ অক্টোবর গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে গত ১৭ অক্টোবর তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।

জবানবন্দিতে এই তিন জঙ্গি জানিয়েছে, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের একটি সেল ‘দারুল জান্নাতের’ ব্যানারে ৩৩ জন জঙ্গি ‘কোড’ নামে সংগঠিত হচ্ছিল। ‘কোড’ নামেই ছিল একে অন্যের পরিচয়। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের প্রকৃত নামের আড়ালে একেকটি ‘কোড’ নাম ব্যবহার করতো। এ, বি, সি, ডি—এই চারটি কোড এ থেকে এ-৯ পর্যন্ত শুরা সদস্য, অন্য সদস্যরা বি, সি ও ডি কোড ব্যবহার করতো।

জানা গেছে, ‘দারুল জান্নাত’ নামের এই গ্রুপটিতে যোগ দিতে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছিল সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া কয়েকজন তরুণ। এর মধ্যে ময়মনসিংহ থেকে সম্প্রতি নটরডেম কলেজে ভর্তি হওয়া সাফায়েত নামে এক শিক্ষার্থী এবং সাতক্ষীরা থেকে এক পুলিশ কনস্টেবলের অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে মোহায়মিনুল ইসলামও ছিল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়িতে একটি চিরকুট লিখে সাতক্ষীরা শহরের মনজিতপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে যায় মোহায়মিনুল ইসলাম। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল সে। ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর এলাকা থেকে মোহায়মিনুলকে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে সাতক্ষীরায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহাইমিনুল ‘হিজরতের’ মাঝপথ থেকে বাড়িতে ফিরে গেলেও সাফায়েত গ্রেপ্তার হয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের হাতে।

‘দারুল জান্নাত’ সেলের নেতৃত্বে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াফেরত এক তরুণ— শাহীন আলম ওরফে ওমর শরীফ। ঢাকার আদাবরের মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে স্কলারশিপ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার হানসিও বিশ্ববদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনার্স পড়ছিলেন তিনি। ‘ভাঙ্গা তরবারী’ নামে একটি ফেসবুক আইডি পরিচালনা করতেন তিনি। পরে তিনি আনসার আল ইসলামের হয়ে ‘দারুল জান্নাত’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। এই গ্রুপের সদস্যরা একে অন্যের নাম জানতো না। নির্দিষ্ট ‘কোড’ নামে একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। শাহীন আলম ওরফে ওমর শরীফ গ্রুপে নিজেই সবাইকে ‘কোড’ সরবরাহ করতেন। গ্রেপ্তার হওয়া হানিফুজ্জামানের কোড ছিল বি-৭।

‘দারুল জান্নাত’-এর মূল নেতা শাহীন আলম ওরফে ওমর শরীফ তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, গাজওয়াতুল হিন্দ বলে ভারতীয় উপমহাদেশে কথিত যে যুদ্ধের কথা উল্লেখ রয়েছে, ওই যুদ্ধের জন্য তিনি মুসলমানদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিলেন। তার ভাষায়, ‘ওই গ্রুপের সূত্র ধরে তারেক, সাইফুল ও হানিফুজ্জামানদের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৯ আগস্ট পরিবারকে না জানিয়ে দেশে ফিরে হানিফুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারেকসহ সবাই সাভারে গিয়ে একত্র হয়ে প্রথমে খুলনায় যাই। সেখানে সাইফুল নামে আরেক সহযোগীসহ সবাই সুন্দরবনে যাই। এরপর সেখান থেকে বান্দরবনের আলীকদমে গিয়ে অর্থ আয়ের জন্য একটি জমি লিজ নিয়ে একটি ক্যাম্প গড়ে তুলি।’

গ্রেফতার হওয়া আরেক জঙ্গি জয়পুরহাটের আলমডাঙ্গার হানিফুজ্জামান বিপ্লব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ‘সুন্দরবনের তারা কিছুটা ভেতরে ঢুকে গাছে উঠে রাত কাটায়। সেখান থেকে তারা যাত্রা করে বান্দরবানে উদ্দেশ্যে। দুই দিন পর বান্দরবান পৌঁছে সেখানে লোকজনকে দাওয়াত দেওয়া ও অর্থ সংগ্রহ করার জন্য পাহাড়ের পাশে একটি জিম লিজ নিয়ে ক্যাম্প তৈরি করে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!