বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে জনস্রোত, আন্দোলন ছড়িয়ে সরকার পতনের হুঙ্কার

পথে পথে বাধা ছিল, কিন্তু সব বাধা ছাড়িয়ে দুপুর হতেই চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড হয়ে ওঠে রীতিমতো জনসমুদ্র। দুপুর থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশের মূল স্থান পলোগ্রাউন্ড মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাও হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য। পাশের সিআরবিও পূর্ণ হয়ে ওঠে মানুষের ভিড়ে।

বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে জনস্রোত, আন্দোলন ছড়িয়ে সরকার পতনের হুঙ্কার 1

বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ শেষ পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন আশা ছড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। এই সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে জনস্রোত, আন্দোলন ছড়িয়ে সরকার পতনের হুঙ্কার 2

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এসএম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ, সহ গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন প্রমুখ।

বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে জনস্রোত, আন্দোলন ছড়িয়ে সরকার পতনের হুঙ্কার 3

জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেট ও সিআরবি এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আশপাশের বাকি সড়কগুলোতেও যানচলাচল অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।

বেলা ২টার দিকে আমবাগান রেলক্রসিং এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীবাহী একটি বাসে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সীতাকুন্ড থেকে আসা ওই বাসে লাঠি হাতে অতর্কিত হামলা চালায় ২০-২৫ জন যুবক। তবে ওই হামলায় বড় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মিরসরাই থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা জহুরুল হক বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন। এবার পুলিশ খুব একটা অসুবিধা করেনি। খালি বারৈয়ারহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র খোকন গাড়ি ছাড়তে বাধা দিয়েছেন। আমরা কৌশল করে সমাবেশে যোগ দিয়েছি৷ স্টপেজ থেকে উঠিনি।’

পলোগ্রাউন্ড মাঠের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চট্টগ্রামের এই জনস্রোত দেখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত। একইসঙ্গে চট্টগ্রামে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে সরকারের পতন ঘটানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক দফা এক দাবি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আজকে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আন্দোলনে পতন হবে সরকারের। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে নির্বাচন। আজকে চট্টগ্রামের সমাবেশে উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের স্লোগান একটাই—সরকারের পতন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপির এই সমাবেশ আর সমাবেশ নেই, তা এখন মহাসমাবেশে পরিণত হয়েছে। আজকে আমরা এমন একটা জায়গা থেকে কথা বলছি যার অদূরে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র। সেখান থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আমি চট্টগ্রামের মানুষকে বলব, এই সমাবেশকে আপনারা সফল করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আজ জাতিসংঘ পরিষ্কারভাবে বলেছে, এখানে গুম হয়। ৭৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার নাই। এখানে হত্যা হয়, গুম হয়। আমাদের সব নেতার ওপর মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব একটা প্রতিষ্ঠান, সেটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, শুধু র‌্যাবকে নয়, শেখ হাসিনার সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। আগের রাতে ভোট নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই সরকার বাংলাদেশকে শ্মশানে পরিণত করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই শেখ হাসিনা সব লুট করে বিদেশে পাচার করছে। এদিকে জনগণ না খেয়ে মরছে। প্রতিটা তরকারির দাম তিন থেকে পাঁচ গুণ বেড়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়িয়েছে। শুনছি, বিদ্যুতের দাম আবার বাড়াবে। এরা লুটপাত করে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি বানায়। আর জনগণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। দুমুঠো খাবার পায় না মানুষ। মানুষের নিরাপত্তা নেই, দিনদুপুরে ডাকাতি, ছিনতাই হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী আজ বন্দি। তিনি ঠিকমত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তারা আমাদের ভয় দেখান আমাদের নেত্রীকে আবার জেলে পাঠাবেন। আসলাম চৌধুরী ছয় বছর ধরে জেলে আছেন। এরা বিচারবিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ, র‍্যাবকে দলীয়করণ করেছেন। আজ সারাদেশের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ আর ছাত্রলীগের কর্মীরা জনগণের পকেট কেটে বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করছে।’

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই চট্টলা থেকে ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। বাংলাদেশ ডাকে স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে। আজ দেশে গণতন্ত্র নেই। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমরা আজ আবারও যুদ্ধে নেমেছি।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আজ আর যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। পেটের ভাতের জন্য মানুষ আজ হাহাকার করছে। ভাত দিতে পারবেন না, বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না, ক্ষমতায় থাকবেন কেন? শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের প্রধানমন্ত্রী না। চোরের স্বভাব যায় না। সুযোগ পাইলে করে চুরি। তাই এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন আমরা মানি না।’

স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে শেখ হাসিনার পতন শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামবাসী ডাক দিয়েছে, তাহলে আর দেরি কিসের। শেখ হাসিনা আপনি ক্ষমতা ছাড়ুন, পদত্যাগ করুন।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের কিছু অংশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। ঢাকা থেকে আসতে নেতাকর্মীদের বাধা দিয়েছে। অনেক নেতাকর্মীকে হোটেল-রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও সমাবেশ থেমে নেই। নেতাকর্মীরা সকল বাধা অতিক্রম করে সমাবেশের মাঠে যোগ দিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে শেখ হাসিনাকে বার্তা দিয়েছে— শেখ হাসিনা এখনই পদত্যাগ করো।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!