রপ্তানি/ বাধা থাকলেও প্রত্যাশা ছাপিয়ে গেল পোশাকখাত

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বিদেশী ক্রেতাদের চাপ, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার পরও এগিয়ে চলেছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প। বাড়ছে তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদন, বাড়ছে রপ্তানি। একইসঙ্গে বাড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাফল্য।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর বিদেশি ক্রেতাদের ‘কনফিডেন্ট’ বৃদ্ধির কারণে রপ্তানি বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা সৃষ্টি, কারখানার মেশিনপত্রের উচ্চায়ন, নতুন বাজার সনৃষ্টিতে সরকারের প্রণোদনা ২ থেকে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা, উচ্চমূল্যের পোশাক ও পোশাকের বহুমুখী করা এবং সবর্শেষ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকায় তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এ ধরনের অগ্রগতি হয়েছে।’ তবু পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি-প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আয় বা লাভ হচ্ছে না। ব্যয় অনুসারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৪ হাজার ১৩৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার)। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৬৮৯ মিলিময়ন মার্কিন ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ হাজার ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ৩০ হাজার ৬১৪ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩ হাজার ৬১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার)। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ১ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছিল।

এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি পোশাক শিল্প। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৩৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল ২৮ হাজার ১৪৯ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। ওই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পে প্রবৃদ্ধি তো হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি আর ব্যবসায় হওয়া এক কথা নয়। পোশাক শিল্প মালিকরা দাবি করে থাকেন প্রবৃদ্ধি হলেও তাদের লাভ হচ্ছে না। ব্যয় অনুসারে তারা দাম পাচ্ছে না। তবে তৈরি পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়।’

এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এএম চৌধুরী সেলিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসায় খারাপ যাচ্ছে- এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। তবে অর্ডার স্লো ও দাম কম। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আমরা নতুন কিছু বাজার পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশসহ রাশিয়া ও চীনে আমাদের পোশাক যাচ্ছে। এছাড়া আমাদেরকে ভ্যালু অ্যাডিশন করতে হচ্ছে। নতুন বাজার এবং ভ্যালু অ্যাডিশনের কারণে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।’

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্সের কারখানার দিকে হাঁটছি। প্রতি মাসেই রপ্তানি আয় বাড়ছে, বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু এ খাতের কিছু সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে।’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতা এবং পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মজুরি, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায় পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বেড়েছে। এছাড়া প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব এবং আমাদের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

মোহাম্মদ আলী/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!