বাদলের স্বপ্নের কালুরঘাট সেতু আগামী বছর

প্রয়াত সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদলের স্বপ্নের কালুরঘাট সেতুর কাজ আগামী বছরের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকাল ১১টায় তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬ লেন বিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার এপ্রোচ সড়ক পরিদর্শনকালে তিনি একথা বলেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সদ্য প্রয়াত চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের স্বপ্নের কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজ কোরিয়ার অর্থায়নে আগামী বছর শুরু হবে। এছাড়া সড়ক সেতুর কাজের ব্যাপারে কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে।’

এর আগে গত ২৭ অক্টোবর দুপুরে আগ্রাবাদ সড়ক ভবনে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে সকালে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘কালুরঘাটে দুটি সেতু হবে। রেল সেতু করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সড়ক সেতু আমাদের মন্ত্রণালয় করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই ঘোষণা সব বিভ্রান্তির নিরসন ঘটাবে। কালুরঘাট সেতুর জন্য জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি দীর্ঘদিনের। কাজেই আমাদের অংশটার কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সেই নির্দেশ দিয়েছি।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ নভেম্বর ভোরে ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৬৭ বছর বয়সী বর্ষীয়ান রাজনীতিক চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল। পরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৪ দফা জানাযা শেষে ৯ নভেম্বর রাতে নিজ গ্রাম বোয়ালখালীর সারোয়াতলীতে তাকে দাফন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা ও সাংসদ বাদলের মৃত্যুর পর তার স্বপ্নের কালুরঘাট নতুন সেতুর কথা চট্টগ্রামে তার রাজনৈতিক বন্ধু প্রতিপক্ষ এমনকি সাধারণ মানুষের আলোচনায় উঠে আসে। প্রত্যেকের দাবি ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন সরকার কালুরঘাটে সড়ক ও রেল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এমনকি যে সেতুর জন্য জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে সংগ্রাম করে গেছেন বাদল সেই সেতুটি যেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দীন খান বাদল এমপি’ সেতু হিসেবে নামকরণ করা হয় সেই দাবি এখন তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

শত বছরের ভারে ন্যুব্জ সেতু কালুরঘাট
জানা গেছে, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনার জন্য ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীতে একটি আপদকালীন সেতু নির্মাণ করা হয়। ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৭০০ গজের সেতুটি তৈরি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মোটরযান চলাচলের জন্য সেতুতে ডেক বসানো হয়। ১৯৫৮ সালে এই এক লেনের সেতুটিই সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ এই সেতু। ফলে ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় সেতু ব্যবহারকারী বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের বাসিন্দারা একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান নতুন সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট রেল ও সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরানো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সেতুটি সরকারের মেগা প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইনের অন্তর্ভুক্ত।

সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু নামে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে ঢাকার রেলভবন কার্যালয়ে পাঠায়। পরে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করে ২৭ মার্চ সংশোধিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়।

প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরমধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বাকি টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

রেল কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, তার সুফলও নির্ভর করছে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের ওপর।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!