বাদলের মরদেহ ঢাকায়, জানাজা ও দাফনের সূচিতে পরিবর্তন

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনউদ্দিন খান বাদলের মরদেহ ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় এয়ার ইন্ডিয়াযােগে শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে মরদেহ পৌঁছার পর বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানসহ পরিবারের সদস্যরা বাদলের মরদেহ গ্রহণ করেন। এ সময় মেয়ে, মেয়ের জামাইসহ ঘনিষ্ঠ পাঁচ আত্মীয় মইনউদ্দিন খান বাদলের মরদেহের সঙ্গে একই ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন।

তবে মইনউদ্দিন খান বাদলের জানাজা ও দাফনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও তাতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঘূূূূর্ণিঝড় বুুলবুলের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে মরদেহ আনার কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সড়কপথে বাদলের মরদেহ চট্টগ্রামে আনা হবে বলে জানিয়েছেন জাসদের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম।

আবুল হাশেম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিমানবন্দরে সাংসদ বাদলের মরদেহ এসে পৌঁছেছে। সেখান থেকে তার মরদেহ কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকার বসুন্ধরার বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে সকাল পর্যন্ত বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজার নামাজের আগে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল ১১টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

বাদলের ছায়াসঙ্গী আবুল হাশেম আরও জানান, সংসদ ভবনে জানাজার নামাজ শেষে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে মরদেহ আনার কথা থাকলেও ঘূূূূর্ণিঝড় বুুলবুলের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সড়কপথে বাদলের মরদেহ চট্টগ্রামে আনা হবে। চট্টগ্রামে বিকাল ৫টার দিকে এসে মরদেহ পৌঁছলে জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে জানাজা শেষে সড়কপথে বোয়ালখালীর সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাজার নামাজ ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

তবে রাত ৯টায় সর্বশেষ নিজ গ্রামের সারোয়াতলী ইব্রাহীম নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেও অপর একটি জানাজা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

সাংসদ বাদলের গ্রামের বাড়ি সারোয়াতলীর খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশেই শনিবার রাতে তাকে সমাহিত করা হবে। এসবের নির্ধারিত সময় ঠিক না হলেও চট্টগ্রামে আসার পর জানাজার নামাজ একটার পর আরেকটা শেষে সকল আনুষ্ঠানিকতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে জানান এ জাসদ নেতা।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী গ্রামে জন্ম মঈন উদ্দিন খান বাদলের। তার বাবা আহমদ উল্লাহ খান ও মা যতুমা খাতুন। স্ত্রী সেলিনা খান। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি, বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চাঁন্দগাও) আসন থেকে মঈন উদ্দিন খান বাদল তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

ছাত্রজীবনে বাদল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। তাদের মুজিব বাহিনী ভারতের জেনারেল সুজন সিংহবানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের সময় তিনি ছিলেন প্রতিরোধ যোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠন করা হলে তিনি এতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান পিপলস ত্রিদেশীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কমিটির সভায় যোগ দিতে তিনি (বাদল) গত ১৮ অক্টোবর কলকাতা যান। ২৫ অক্টোবর বেঙ্গালুরু নারায়ণা হৃদয়ালয়ে চেকআপ করাতে যান। সেখানে তার এনজিওগ্রাম করা হয়। পরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেন স্ট্রোক করেন এবং তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তখনই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!