বাদলের আসনে নির্বাচন করছেন মোরশেদ খান!

পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-৮ আসনের (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) উপনির্বাচনে ভোটের হিসাব নিকাশ। চতুর্থমুখী লড়াইয়ে জমে উঠছে ভোটযুদ্ধ। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগেরই ১৪ মনোনয়ন প্রত্যাশীর ভিড়ে যখন নৌকার টিকিট কে পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে উন্মুখ সকলে। নৌকার হিসাব যখন এরকমই স্বাভাবিকভাবে ধানের শীষের প্রার্থী কে সেটাও আলোচ্য বিষয়।

তবে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টেরই একক প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সেটা নিশ্চিত। আর নৌকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদও। সেটা কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা।

এমন সমীকরণের মাঝে ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলুকে জাপা থেকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ধরে নেওয়া হচ্ছে, এই তিন জনের মধ্যেই হবে ত্রিমুখী ভোটের লড়াই। এরমাঝে চমকপদ খবর হলো নির্বাচন করছেন চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির হয়ে বারবার নির্বাচিত সাংসদ এম মোরশেদ খান। যিনি গত নভেম্বরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি এবার উপ নির্বাচনে অংশ নিবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। চট্টগ্রাম থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে তা সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করবেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত নবম, দশম ও চলমান একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে অংশ না নিলেও এই আসনে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি থেকে দুই বার করে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এম মোরশেদ খান। এরমধ্যে একবার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত আরেকবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। যদিও বা গত তিন সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় এই আসনে বিএনপির ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীর বিরুদ্ধে জিতে সংসদে যান প্রয়াত মইনউদ্দীন খান বাদল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এম মোরশেদ খান বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন জানিয়ে বলেছেন, তিনি ঢাকায় গিয়ে কথা বলবেন এ বিষয়ে।

তবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খানের ঘনিষ্ট এক জনপ্রতিনিধি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খান সাহেব গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করে উনার অনুসারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবার কাছে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। উনার নির্বচনী জীবনেতো পরাজয় নেই। সরকারে প্রভাবশালী মানুষের সাথে উনার উঠাবসা। সব কিছু মিলিয়েই নির্বাচন করছেন। কেননা তিনি দীর্ঘদিন এই আসনের এমপি ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন।’

শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মোরশেদ খান তার এক আত্মীয়কেও বলেছেন, ‘আই নির্বাচন গইজ্জুম’। তবে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

জানা গেছে, সরকারের প্রভাবশালী এক উপদেষ্টার সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে উপ নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব বুঝেই মোরশেদ খান স্বতন্ত্র হলেও নির্বাচন করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মোরশেদ খানকে বলা হয়েছে নির্বাচন গতবারের তুলনায় অনেকটা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। সব মিলিয়ে নানা হিসাব নিকাশ শেষে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন এ আসনের চার বারের সাংসদ মোরশেদ খান।

মইনউদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত ২০০৮ সাল থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ২৮৫/চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল মারা যাওয়ায় তার আসনে আগামী ১৩ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম ৮ আসনটি চট্টগ্রাম জেলার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও নং ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়ন, পশ্চিম গোমদন্ডী ইউনিয়ন, পূর্ব গোমদন্ডী ইউনিয়ন, শাকপুরা ইউনিয়ন, সারোয়াতলী ইউনিয়ন, পোপাদিয়া ইউনিয়ন, চরনদ্বীপ ইউনিয়ন, আমুচিয়া ইউনিয়ন ও আহল্লা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।

চট্টগ্রাম ৮ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯২২ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন। বোয়ালখালী উপজেলায় ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার। কেন্দ্র সংখ্যা ১৮৯টি।

জানা যায়, স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের মরহুম এম কফিল উদ্দিন, দ্বিতীয় সংসদে সিরাজুল ইসলাম, তৃতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মনজুর মোরশেদ খান, চতুর্থ সংসদে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, পঞ্চম সংসদে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম, ৬ষ্ঠ সংসদে জাতীয় পার্টির হয়ে মনজুর মোরশেদ খান, ৭ম সংসদ, ৮ম সংসদে বিএনপির মনজুর মোরশেদ খান এরপর থেকে টানা নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মহাজোটের শরীক জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল সাংসদ হন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!