বাণিজ্যের উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে যুক্ত হোক শ্রম দিবস

আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস আজ

আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস পরিচিতি পেয়েছে ‘মে দিবস’ হিসেবে। বছরের পহেলা মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিবসটি। মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো। যথাযথ মর্যাদা আর তাৎপর্যে দিবসটি পালিত হয় বাংলাদেশেও। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরো অনেক দেশে দিবসটি পালিত হয় বেসরকারিভাবে। দিবসটি নিয়ে যত আনুষ্ঠানিকতাই থাকুক না কেন, দিবসটির মূল প্রয়োগ ঘটান ব্যবস্থাপকরা। তারা তাদের শ্রম ব্যবস্থাপনার মধ্যেই গড়ে তোলেন দিবসটির প্রায়েগিক রূপ।

international-labor-day-chittagong

কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে নিয়োজিত বিভিন্ন উপায় উপকরণ যথা; মানুষ, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল,অর্থ, বাজার পদ্ধতিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য সুষ্ঠু পরিচালনাকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়। ব্যবস্থাপনার কাজ অর্থাৎ পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মী সংস্থান, প্রেষণা, সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজগুলো চক্রাকারে আবর্তিত হওয়াকে ব্যবস্থাপনা চক্র বলা হয়। ব্যবস্থাপনার উপকরণ ছয়টি। ব্যবস্থাপনার উপকরণসমূহ হলো মানুষ, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, অর্থ, বাজার ও পদ্ধতি। ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একেবারে সাধারণ এসব তথ্যেও দেখা যায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের অন্যতম প্রধান উপকরণ মানুষ বা কর্মী। যা পরিচালনার মূখ্য ভুমিকায় থাকেন ব্যবস্থাপকরাই।

international-labor-day-chittagong

ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত উচ্চশিক্ষায় নানা বিষয়াদি পড়ানো হলেও মে দিবস ও এর তৎপরতা নিয়ে আলাদা কোন পাঠ্যক্রম তৈরি হয়ে ওঠেনি। ফলশ্রুতিতে দিবসটির নৈতিক দিকের পঠন গ্রহণযোগ্যতা না পাওয়ায় তথ্যগতভাবে ধারণা থাকলেও শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে অনুভব করছেন না নৈতিকতার শেকড় থেকে। তাই সৃষ্টি হয়ে ওঠছে না কর্মী বান্ধব ব্যবস্থাপক।

ব্যবস্থাপকরা প্রতিনিয়তই মালিকপক্ষের ধ্বজাধারী হয়ে উঠেছেন। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠান ব্যাপক হারে হারাচ্ছেন শ্রম পরিবেশ। উৎপাদন বিমুখতার মধ্য দিয়ে নানা প্রতিকূলতায় চলছেন শ্রমিক জনতা।

international-labor-day-chittagong

দিবসটি নিয়ে শুধু একদিনের আলোচনা-পর্যালোচনা নয় বরং সরাসরি শিক্ষা ব্যবস্থায়, পাঠ্যক্রমে বিশেষ কোর্স হিসেবে দিবসের নানা দিকে নিয়ে আলোচনা করলে সেটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো ব্যবস্থাপনায়।

উল্লেখ্য, ১৮৮৬ সালে দৈনিক আটঘন্টার কাজের দাবিতে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল শ্রমিকরা। সেদিন শ্রমিকদের ঘিরে থাকা পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপ করে এক অজ্ঞাতনামা।এর পরেই শ্রমিকের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় মারা যান প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক। মারা যান পুলিশও।

international-labor-day-chittagong

১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক-এর প্রথম কংগ্রেসে পরের বছর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। আনিুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ১৮৯১ সালের আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে।

এর পরপরই ১৮৯৪ সালের মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে, এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘন্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পহেলা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনের সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহবান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না থাকলেও বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে’র ১ তারিখে “বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না করার” সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

international-labor-day-chittagong

অনেক দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে পালনের দাবি জানায় এবং অনেক দেশেই এটা কার্যকর হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ সালে। আমেরিকা ও কানাডাতে অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে শ্রম দিবস পালিত হয়। সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং শ্রমের নাইট এই দিন পালনের উদ্যোগতা। হে মার্কেটের হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন পয়লা মে তারিখে যে-কোন আয়োজন হানাহানিতে পর্যবসিত হতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালেই তিনি নাইটের সমর্থিত শ্রম দিবস পালনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন।

দিনটির পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন বিশ্লেষণাত্মক পাঠ্যক্রম সমৃদ্ধ করবে ব্যবসায়িক বিদ্যাকে – এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!