বাজার বয়কট, ৬ মাস ধরে দুর্ভোগে তিন ইউনিয়নের মানুষ

রাঙ্গামাটি

গত ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে গত ছয়মাস ধরে অঘোষিতভাবে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার নানিয়ারচর বাজার বয়কট করেছে তিন ইউনিয়নের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাহাড়ে পূর্ণশায়ত্বশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পার্বত্য শান্তি চুক্তিবিরোধী সংগঠন প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) ‘চাপে’ সাধারণ মানুষ বাজারে আসছে না। এতে করে উপজেলার ১ নম্বর সাবেক্ষং, ২ নম্বর নানিয়ারচর সদর ইউনিয়ন ও ৩ নম্বর বুড়িঘাট ইউনিয়নের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ না আসায় দুর্ভোগে পড়েছে ক্রেতানির্ভর এ বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী। প্রতিনিয়ত ঋণের বোঝা বাড়ছে তাদের।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত কয়েক ধাপে বাজার বয়কট করেছে ইউপিডিএফ। তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এক প্রকার ‘সমঝোতা’ হলে কিছুদিন বাজারে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ক্রেতারা আসতো। এখন ফের বাজার বয়কটের কারণে উপজেলার নানিয়ারচর সদর, সাবেক্ষ্যং ও বুড়িঘাট ইউনিয়নের পাহাড়ি লোকজন বাজারে না আসায় লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।

তবে অভিযোগের তীরে থাকা ইউপিডিএফের প্রতিপক্ষ সংগঠনগুলো বলছে, জনগণকে জিম্মি করতে ইউপিডিএফ হঠকারী সিদ্ধান্তে বাজার বয়কট কর্মসূচি দিয়েছে। তাদের (ইউপিডিএফ) নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার পাহাড়ি মানুষ হাট-বাজারে এলে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ বাজারে আসছেন না।

এ ব্যাপারে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন চাকমা বলেন, ‘ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) বিভিন্নভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তারা উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষকে চাপে রেখে বাজারে আসতে দিচ্ছে না। তারা এ ধরণের হঠকারী সিদ্ধান্ত নতুন নয়, এর আগেও ঘটিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের কাছে ১৪ লাখ টাকায় বিক্রি হয়ে বাজার বয়কট প্রত্যাহার করেছে।

এদিকে ইউপিডিএফ নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকার বেশ কয়েকজন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ জানান, রাজনৈতিক দলের নেতারা এলাকায় এলাকায় পাহাড়িদের বাজারে যেতে নিষেধ করেছিলো। তাই নির্বাচনের পর থেকে কেউ বাজারে আসছেন না। আবার কেউ গেলেও তাকে হয়রানির শিকার হতে হয়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন জানান, সাধারণ মানুষ তো বাজারে যেতে চায়। কারণ ঘরে চাল-ডাল থাকলেও তেল-ওষুধ কেনার জন্য হলেও বাজারে যেতে হয়।

নানিয়ারচর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ঝিল্লোল মজুমদার বলেন, ‘নানিয়ারচরে বাজারে প্রায় ২০০ এর অধিক দোকানপাট রয়েছে। গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে ইউপিডিএফ অঘোষিতভাবে বাজার বয়কট করেছে। যার কারণে তিন ইউনিয়নের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন বাজারে না আসায় বেচাকেনা নেই। অন্যদিকে সাপ্তাহিক হাট বুধবারেও হাট মিলছে না। এতে করে বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেচাবিক্রি না থাকায় ঋণের জালে আটকে গেছে ব্যবসায়ীরা। বাজার চালুর ব্যাপারে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচিও করেছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ জানান, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছয় মাস ধরে অঘোষিতভাবে বাজার বন্ধ রয়েছে। আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ বাজার বর্জন করেছে। তাই ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার পাহাড়ি লোকজন বাজারে আসছেন না।

নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি চাকমা বলেন, ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের পরদিন ১৯ মার্চ থেকেই কোনো ইস্যু ছাড়াই নানিয়ারচর বাজার বয়কট চলছে। নির্বাচন খারাপ-কিংবা ভালো হয়েছে এ ধরণের কোনো মন্তব্য ছাড়াই এতদিন বাজার বন্ধ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ বাজার বয়কট করেছে। কিন্তু ঘিলাছড়িসহ অন্যান্য বাজারে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। এ ব্যাপারে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিং ও উন্নয়ন কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি তোলা হয়েছে। বাজার বয়কটের কারণে ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা নেই। অন্যদিকে বাজারে আসতে না পারায় সাধারণ পাহাড়িদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসউদ পারভেজ মজুমদার বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই বাজারে পাহাড়ি এলাকার ক্রেতারা আসছে না এমন কথা সত্য। আমরা বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান-কার্বারিদের সঙ্গে কথা বলেছি গ্রামের লোকজনকে বাজারমুখী করার জন্য।

এ প্রসঙ্গে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই ইউপিডিএফের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!