বাজারে আগুন, ছোট হয়ে আসছে পণ্যের ঝুলি—সংসার চালাতে হিমশিম

চাল, ডাল ও তেলের দাম বৃদ্ধির পর এবার পেঁয়াজ, আটা, ময়দা, মুরগি, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার চালাতে। দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে রান্নার গ্যাস, সাবান ও টুথপেস্টের মতো নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীও। বেড়েছে শিশু খাদ্যের দাম। বাদ যায়নি আচার চকলেটের দামও। এভাবে ‘বাজারে আগুনের’ কারণে সংসারের বাজারের ঝুলি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।

সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণি পেশার মানুষকে। এখন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের অপেক্ষায় থাকেন ক্রেতারা। কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তেল-চিনি কিনে বাসায় ফেরেন অনেকেই। আগে যারা লাজ-লজ্জার ভয়ে টিসিবির পণ্য কিনতেন না তারাও এখন টিসিবির ক্রেতা।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের স্ত্রী শারমিন রিমা। স্বামীর ব্যস্ততার কারণে সংসারের নিত্য বাজার তিনিই করেন। দুই সন্তান নিয়ে এখন নুন আনতে পানতা ফুরায়। সংসার চালাতে স্বামীর বেতনের টাকা মাসের ১৫ দিনেই চলে যায়। প্রতি মাসেরই কর্জ হয় সংসারে।

শারমিন রিমা বলেন, সংসার চালানোর ফাঁকে কারও অসুস্থতা দেখা দিলে কর্জ করা ছাড়া আর উপায় থাকে না। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিও পাওয়া যায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরণের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সংসারের জন্য একটি পণ্য কিনলে অন্যটি কিনতে পারি না। এভাবে সংসার কিভাবে চালাবো?

হাসান তালুকদার একজন চা দোকান ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম এখন চড়া। বাজারে এক কেজি চালের দাম ৬০ টাকা। এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৫০ টাকা। কিছুদিন আগেও এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকায় কেনা যেত, এখন সেটা ১৭০ টাকা। প্রতিদিন লস দিয়ে ব্যবসা করছি। নিজের সংসারটাই চালাতে পারছি না।

হাসান তালুকদার বলেন, বাজারে দুই সপ্তাহে বেড়েছে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও সবজির দাম। পেঁয়াজের দাম মোটামুটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে কেনা যেত, তা কিনতে এখন ৮০ টাকা লাগছে। কোনো উৎসব বা উপলক্ষ নেই, তবু ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ টাকা ছুঁয়েছে, যা সাধারণত ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে থাকে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু যে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তা নয়। বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের দাম। বেড়েছে ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, নারকেল তেল, শৌচাগারে ব্যবহার করা টিস্যুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল, গম, চিনি, ডাল, গুঁড়া দুধ ও শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বাড়তি। এই বৃদ্ধির প্রবণতা শুরু হয়েছিল এ বছরের শুরু থেকেই।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরণের পণ্যের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তো অনলাইনের যুগ। বহির্বিশ্বে কোনো কিছুর দাম বাড়লেই এখানেও বেড়ে যায়। পাইকারিতে তেল, চিনি, চাল, মসর ডাল, আঁদা, পেয়াঁজ, রসুন সব কিছু দাম বেড়েছে। কয়েক মাস আগে আমরা মসলা জাতীয় পণ্য বিক্রিও করতে পারিনি, দাম বাড়বে দূরের কথা। এখন সেগুলোর দাম বেড়েছে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশে মূল্যবৃদ্ধির জন্য শুধু বিশ্ববাজারকে দায়ী করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের কারসাজিও এ ক্ষেত্রে দায়ী। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা পেঁয়াজের দামকে সামনে এনে বলছেন, ভারতে সামান্য দাম বাড়তেই মাত্র দুই সপ্তাহে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল কেন?

তিনি প্রস্তাব দিয়ে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে প্রশাসনকে। সরকারের উচিত একটি পর্যালোচনা করা, ঘন ঘন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারের দ্রব্যেমৃল্য যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে দামও কমে। টিসিবির পণ্যের ট্রাক আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আরও ৪টি ট্রাক বৃদ্ধি করে মোট ১৩টি ট্রাকে পণ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি ট্রাকে তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজসহ ১৮০০ কেজি পণ্য থাকতেছে। টিসিবির পণ্যে মূল্য পূর্বের মতোই আছে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!