বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম গৌরবের দিন

বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠতম আত্মদানে অর্জিত শ্রেষ্ঠতম গৌরবের বিজয় দিবস আজ। পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির দিন আজ। আজ ১৬ ডিসেম্বর— বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জনের স্মৃতিবিজড়িত দিন।

সারা দেশের মানুষ ও প্রবাসী বাঙালিরা দিনটি পালন করছে বিপুল আনন্দ-উৎসব এবং একই সঙ্গে বেদনা নিয়ে। দেশের স্বাধীনতার জন্য যে অকুতোভয় বীর সন্তানেরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞ জাতি গভীর বেদনা ও পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সেই মৃত্যুঞ্জয়ী বীর সন্তানদের।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছে বিজয় উৎসবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানাগুলোতে দুপুর ও রাতে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে।

স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল, সেখানেও বাঙালিদের ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন। প্রথম আঘাত এসেছিল মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন বিশ্বে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা আছে তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে তার আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশের বীর সন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির ভেতর দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি। আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রমনা রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বিজয়ী বাঙালিরা। সেই পতাকা উঁচিয়ে চলছে প্রগতির পথে বাঙালির অভিযাত্রা।

তবে এ কথা সত্য যে গেল ৪৮ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অর্জন আছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ, শিল্প, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য আছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকেও আমাদের অগ্রগতি অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশি। তা সত্ত্বেও স্বীকার করতে হবে যে প্রতিটি নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এখনো দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এখনো বহু মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অপুষ্টির শিকার। এসব ক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক কিছু করণীয় আছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!