বাকলিয়ার এক উপনির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন গুণ সদস্য

আজ বুধবার শেষ হয়ে গেল চট্টগ্রাম ১৭ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম বাকলিয়ার উপনির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীও শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। মাত্র ৯ মাস স্থায়িত্বকালের এ উপনির্বচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে আগ্রহ না থাকলেও প্রার্থীদের অনুসারীদের মাঝে বিরাজ করছে ব্যাপক উত্তেজনা। সে কারণে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাচন কমিশনও নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) অনুষ্ঠিত হবে এই উপ-নির্বাচন।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ওয়ার্ডের ১৭টি কেন্দ্রকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে ঘোষণা না করলেও উপ নির্বাচনে এসে সব কেন্দ্রকেই ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি সংসদ নির্বাচনের চেয়ে তিনগুণ আইন-শৃংখলা বাহিনী মোতায়ন করা হচ্ছে এ নির্বাচনে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ৪৯ হাজার ৮২৫ জন। এর মধ্যে ২৩ হাজার ৭৪৮ জন পুরুষ এবং ২৬ হাজার ৭৭ জন রয়েছে মহিলা ভোটার। এ ওয়ার্ডে মোট ১৭টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষ আছে ২২৪টি।

এ নির্বাচনের ১৭টি ভোট কেন্দ্রকেই অতি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ঘোষণা করায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখানে একজন রিটার্নিং অফিসারের পাশাপাশি ১৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১২৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ২৪৮ জন পোলিং অফিসার সরাসরি নির্বাচনী কাজে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ জন উচ্চপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তা।

গত সংসদ নির্বাচনে যে পরিমাণ আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়ন ছিল এবার তার চেয়ে তিন গুণ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি টহল টিম হিসেবে কাজ করবে। এসব বাহিনী মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করেছে বলে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌’এ নির্বাচনটি ইভিএমের মাধ্যমে হবে। সংসদ নির্বাচনের পর দ্বিতীয়বারের মত ইভিএমে হওয়ায় সেটা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। প্রার্থী বেশি হওয়ায় আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ধরনের প্রস্তুতি ছিল তার চেয়ে সব দিক দিয়ে তিনগুণ বেশি প্রস্তুতি রয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।’

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ এপ্রিল বাকলিয়া ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম জাফরুল হক মারা যাওয়ায় গত ১২ জুন ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর নির্বাচন কমিশন আগামী ২৫ জুলাই এ ওয়ার্ডে উপ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে। এখানে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর মরহুম একেএম জাফরুল ইসলামের পুত্র একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক।

আর আওয়ামী লীগ থেকে সরাসরি সমর্থন না পেলেও নিজ নিজ অনুসারী নেতাদের নিয়ে মাঠে আছেন পাঁচ প্রার্থী। রেডিও প্রতীক নিয়ে লড়ছেন মাসুদ করিম টিটু। তিনি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক শহিদুল আলম। তিনি এর আগেও ওই ওয়ার্ড থেকে তিনবার কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত শহিদুল আলম।

মূলত আরিফুল হক চৌধুরী ডিউক, মাসুদ করিম টিটু এবং শহিদুল আলমের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন এলাকার ভোটাররা। এছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন লাটিম প্রতীকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শফি, টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নগর যুবলীগের সাবেক সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শেখ নাঈম উদ্দীন লড়ছেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!