বাংলাদেশ ক্রিকেটে ২০২০ সালের চ্যালেঞ্জ

চরম হতাশার মধ্য দিয়ে ‌শেষ হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে ২০১৯ সালটা। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণেই মেলেনি প্রত্যাশিত সাফল্য। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ট্রফি জয়ের স্মৃতি ছাড়া ভুলে যাওয়ার মতো একটি বছর কাটিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এসবকে ছাড়িয়ে বছরটিকে আরও হতাশাগ্রস্ত হয়ে উঠে যখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় সাকিব আল হাসানকে আইসিসি এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। তবে ঘড়ির কাঁটা যেমন থেমে থাকে না তেমনি ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে থাকলে আরও পেছনে হা^টতে থাকবে দেশের ক্রিকেট। তাই উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে বাংলাদেশকে তাকাতে হবে সামনে। কিন্তু নতুন বছর বাংলাদেশকে জানাচ্ছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা ২০২০-এ বাংলাদেশের বেশিরভাগ ম্যাচই বিদেশের মাটিতে। নিজেদের দুর্বলতাকে জয় করার চ্যালেঞ্জ কতটা নিতে পারবেন মুশফিক-তামিমরা?

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন খুব বড় আশা এখনই করছেন না। তবে তিনি স্বপ্ন দেখেন এখনকার সম্ভাবনাময় তরুণরা যখন জাতীয় দলে জায়গা শক্ত করে নেবেন তখন বদলাবে চিত্র। ‘২০২০ সাল আমাদের জন্য অসম্ভব কঠিন, সবচেয়ে কঠিন। গত চার-পাঁচ বছরে যত সাফল্য এসেছে তার বেশিরভাগই কিন্তু দেশের মাটিতে। এখন (২০২০ সাল) তো বেশিরভাগই দেশের বাইরে। এটা বড় পার্থক্য। কেননা আমাদের পারফরম্যান্স সবচেয়ে খারাপ হয় বাইরে খেলতে গেলে।’

‘তবে একটা জায়গাতে আমি আশাবাদী। যদি অনূর্ধ্ব-১৯ দল দেখেন যারা কিনা এ বছর বিশ্বকাপ খেলতে সাউথ আফ্রিকা যাচ্ছে। এর আগে যত টিম পাঠিয়েছি বাইরে প্রস্তুতি হিসেব করলে এর চেয়ে ভালো করে টিম পাঠাতে পারিনি। তারা ইংল্যান্ডে খেলে এসেছে, ২-০ তে জিতেছে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ৪-১ এ জিতে এসেছে। ওসব কন্ডিশনে তারা খেলেছে। এই দিক থেকে যদি বলি ভাল করছে ভাল খেলছে। আগে শুধু জাতীয় দলকে বাইরের এসব দেশে পাঠাতে বেশি আগ্রহী ছিলাম, এখন আমরা যুব দল পাঠাচ্ছি। ‘এ’ দল পাঠাচ্ছি, ইমার্জিং দল পাঠাচ্ছি। এর কারণ হচ্ছে তাদের বেশি বেশি সুযোগ দেয়া ওই কন্ডিশন সম্পর্কে বোঝা। তারা যাতে খাপ খাওয়াতে পারে। সেদিক থেকে যদি চিন্তা করি সামনে ভবিষ্যত ভালো। তবে ২০২০ যে কেমন হবে সেটা বলা কঠিন। তবে আমার ধারণা ২০২২ এর মধ্যে আমরা একটা ভাল টিম দাড় করাতে পারব।’

হতাশার ২০১৯
২০১৯ সালে ১৮টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র সাতটি। হার ১১ ম্যাচে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডে গেলেও ১০ দলের আসরে অষ্টম হয়ে ফিরতে হয় মাশরাফীর বিন মোর্ত্তজার দলকে। ৮ ম্যাচ খেলে জয়ে আসে মাত্র তিনটিতে। টি-টোয়েন্টিতে তুলনামূলক ভালো করেছে বাংলাদেশ। সাত ম্যাচের চারটিতে জিতেছে টাইগাররা।

পাঁচ ম্যাচের চারটিতে ইনিংস ব্যবধানে হার। অপরটি র‌্যাঙ্কিংয়ে পেছনে থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে হার। ২০১৯ সালে টেস্টে বাংলাদেশের এ ফল অশনি সংকেত ছাড়া আর কিছুই নয়। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দুই দশকের পথচলায় এতটা বাজে পারফরম্যান্স শুরুর বছরগুলোতেও করেনি বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে বছরের প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। হ্যামিল্টনে ইনিংস ও ১২ রানে হেরে যাওয়া দল ওয়েলিংটনে গিয়ে হার মানে ইনিংস ও ১২ রানে।

বছরের তৃতীয় টেস্ট বাংলাদেশ খেলে সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। চট্টগ্রামে স্পিনিং উইকেটের ফায়দা নিয়ে রশিদ খানের দল ম্যাচ জিতে নেয় ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। বছরের শেষ টেস্ট সিরিজে ভারতে গিয়ে ধবলধোলাই বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হল ইনিংস ব্যবধানে পর পর দুটি বাজেভাবে ম্যাচ হেরে।

২০২০ সালের কঠিন পথ
পুরনো ব্যর্থতা ভুলে ২০২০ সালকে নতুন করে রাঙানোর সুযোগটা প্রথম মাসেই পেতে পারে বাংলাদেশ। নির্ধারিত সূচিতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে টাইগারদের। সেখানে ২ টেস্টের সঙ্গে ৩ টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ।

তবে নিরাপত্তা ইস্যুতে এখনও সবুজ সংকেত পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যে কারণে চূড়ান্ত হয়নি এ সফরটি। আবার সফর চূড়ান্ত হলেও, পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট খেলতে রাজী নয় বাংলাদেশ। শুধু টি-টোয়েন্টি খেলতে সে দেশে যাওয়ার কথা বলেছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

পাকিস্তান সফর না হলে নতুন বছরে প্রথমবারের মতো মাঠে নামতে মার্চ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশকে। তখন ১ টেস্ট ও ৫ টি-টোয়েন্টি খেলতে দেশে আসবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল। এ সিরিজ একপ্রকার চূড়ান্তই। শেষ দিকে কোনো ঝামেলা না হলে সময়মতোই মাঠে গড়াবে খেলা।

একই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এশিয়া একাদশ ও বিশ্ব একাদশের মধ্যকার দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়োজন করবে বিসিবি। যেখানে অবশ্য পুরো বাংলাদেশ দলের সবার খেলার অবকাশ থাকছে না। এরপর থেকে পুরো বছরে খেলার ওপরেই থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এর মধ্যে আইসিসি ইভেন্ট রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে যেটি হবে অস্ট্রেলিয়াতে। এর আগে সেপ্টেম্বরে হবে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। এ টুর্নামেন্টের ভেন্যু এখনও ঠিক হয়নি।

সবমিলিয়ে ২০২০ সালে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে প্রায় ১০ টেস্ট, ৬ ওয়ানডে ও ২০ টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ। ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে শেষ হবে টাইগারদের বছর।

২০২০ সালে বাংলাদেশের যত খেলা
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি: পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ টি টেস্ট ও ৩ টি টি-টোয়েন্টি (দেশের বাইরে)
ফেব্রুয়ারি: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ টি টেস্ট (হোম সিরিজ)
মার্চ: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১ টি টেস্ট ও ৫ টি টি-টোয়েন্টি (হোম সিরিজ)
মে-জুন: আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১ টি টেস্ট, ৩ টি ওয়ানডে ও ৩ টি টি-টোয়েন্টি (দেশের বাইরে)
জুলাই-আগস্ট: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ টি টেস্ট (দেশের বাইরে)
আগস্ট-সেপ্টেম্বর: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ টি টেস্ট (হোম সিরিজ)
সেপ্টেম্বর: এশিয়া কাপ (পাকিস্তান)
অক্টোবর: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টি টি-টোয়েন্টি (দেশের বাইরে)
নভেম্বর: আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (অস্ট্রেলিয়া)
ডিসেম্বর: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ টি ওয়ানডে (হোম সিরিজ)

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!