বাঁশখালীর মন্দিরে হামলার তিন মামলায় ৯৭০ আসামি

১৫ মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে, দাবি হিন্দু নেতাদের

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এই তিন মামলায় এজাহারনামীয় ৬২ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৮০০ থেকে ৯৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বুধবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে হঠাৎ করেই বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার জলদাশ পাড়ার পূজামণ্ডপে হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই তাণ্ডবে মোট ১৫টি মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। এর মধ্যে একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করাসহ বাকি ১৪টি মন্দিরের তোরণ ভাঙচুর ও তোরণে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে— এমনটাই দাবি পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের।

এদিকে দূর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিনে হওয়া এই হামলার ঘটনায় ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা। যাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের লোকই ছিল। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। যদিও এক্ষেত্রে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের দাবি, সেদিনের হামলায় ৪০-৪৫ জন আহত হয়েছেন।

বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাঁশখালীতে অষ্টমীর দিনে মন্দিরে হামলার ঘটনায় আলাদা আলাদা তিনটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে চাম্বলের মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা, নাপোড়ার মন্দিরা গেইট ভাঙচুর ও কেন্দ্রীয় কালী মন্দির জলদির গেইট ভাঙচুরের ঘটনায় অন্য দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম আরও জানান, ‘এই তিন মামলার একটিতে ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা, অন্য একটিতে ২১ জন এজহারনামীয় আসামিসহ ১০০-১২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় ৪১ জন এজহারনামীয়সহ ৩০০-৩৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (১৮ অক্টোবর) রাত পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

অন্যদিকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেদিন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হয়েছিল।’

ঘটনার দিন আহত রোগীদের সরাসরি সেবা দেওয়া উপজেলা মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস শশী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মোট ৩০ জনের মত রোগীকে সেবা দিয়েছি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেফার করা লাগছে ৪ জনকে। বাকিদের আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই ছেড়ে দিয়েছি।’

আহতদের আঘাত কেমন ছিল— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. শশী বলেন, ‘অনেকের থুতনিতে আঘাত ছিল, অনেকের হাত হাড্ডিসহ কেটে গেছে, মাথায় আঘাত ছিল। কোনভাবেই আমরা ব্লিডিং বন্ধ করতে পারছিলাম না। তাদের আমরা রেফার করেছি।’

হামলায় আহতদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের রোগী বেশি ছিল জানিয়ে ডা. শশী বলেন, ‘হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে হিন্দু রোগী বেশি ছিল। মুসলিম ছিল ৭-৮ জন। তবে মুসলিম রোগীদের বেশি রেফার করতে হয়েছে। সেখান থেকে তিনজনকে চট্টগ্রাম রেফার করতে হয়েছে। আর হিন্দু রোগী এসেছে বেশি। তাদের মধ্য থেকে একজনকে রেফার করতে হয়েছে।’

মন্দিরে হামলার ঘটনায় মোট কতজন আহত হয়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে বাঁশখালী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট উত্তম কারণ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মোট ৪০-৪৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনকে চট্টগ্রাম পাঠাতে হয়েছে। যাদের চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে ২৩ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে আসে। একজন একদিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। অন্য একজন দুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর এক আত্মীয়ের বাসায় আছে এখন। আরও একজন এখন পর্যন্ত চকরিয়া খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

কয়টি মন্দিরে হামলা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে এডভোকেট উত্তম কারণ বলেন, ‘মোট ১৫টি মন্দিরে হামলা হয়েছে। এর মধ্যে চাম্বলে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে। বাকিগুলোতে তোরণ ভাঙচুর করেছে, তোরণে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।’

মন্দিরে হামলার ঘটনায় প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা কেমন ছিল— এমন প্রশ্নের উত্তরে উত্তম কারণ বলেন, ‘প্রশাসন নীরব ছিল। প্রশাসনের সামনেই তো হামলা হয়েছে। তবে আমাদের সংসদ সদস্য খুব কার্যকর ভূমিকা নিয়েছেন। উনি নিজে রাতেই বিভিন্ন মন্দিরে গেছেন রাত ৩টা-৪টা পর্যন্ত। উনার ভূমিকার কারণে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অস্টমীর দিন এখানে একটা মন্দিরে হামলা হয়েছে। বাকি যে ১৪-১৫টার কথা বলা হচ্ছে এগুলোর কোথাও তোরণ ভেঙ্গেছে তেমন গুরুতর কিছু না। আমরা খুব কঠোর অবস্থানে আছি। সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনার পরদিনই জেলা প্রশাসক মহোদয় ক্ষতিগ্রস্থ মন্দির পরিদর্শন করেছেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!