বাঁশখালীর কর্মসূচি স্থগিত

baskhali project - Copyবাঁশখালীর গণ্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে পরস্পর বিরোধী কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।  বিদ্যুৎ কেন্দ্রএ নিয়ে এলাকাবাসীর কাফন মিছিল ও উপজেলা পরিষদ ঘেরাও এবং তা প্রতিহতে উপজেলা সদরে ডাকা আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের ‘প্রতিরোধ কর্মসূচি’র কারণে সৃষ্ট রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির আপাত অবসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘বিশেষ বার্তার’ কারণে কাফন মিছিল ও ঘেরাও কর্মসূচি ১৫ দিনের জন্য এই কর্মসূচি স্থগিত করা হয় হবে জানিয়েছেন গণ্ডামারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটির সভাপতি লেয়াকত আলী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন গতকাল বিকেল ৫টায় গণ্ডামারায় এসেছেন। গণ্ডামারাবাসী তাদের দাবি দাওয়ার কথা উনাকে বলেছেন। উনি সব দাবির ব্যাপারে একমত পোষণ করে ১৫ দিনের সময় চেয়েছেন।  সে কারনে আমরা ১৫ দিনের জন্য আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করেছি, বাতিল করিনি।

আবদুল্লাহ কবির লিটনের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, এ হত্যাকান্ডের জন্য দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা, আহতের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের দ্রুত জামিনের আশ্বাস দেয়ার প্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। তাছাড়া বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে কয়লা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে তিনি আশ্বাস দেন। গণ্ডামারার শতশত মানুষের সামনে দেয়া এসব আশ্বাস আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের আস্থা আছে। তিনি জনগণের বিপক্ষে যাবেন না। আবদুল্লাহ কবির লিটনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট আ ন ম শাহাদাত আলম ও মৌলভী নুর হোসেনসহ অন্যান্যরা। এদিকে বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটির কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রতিরোধ কর্মসূচি আর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

ঘটনাস্থলে আইনজীবী প্রতিনিধি দল :

গণ্ডামারার ঘটনায় সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মাহবুব উদ্দিন আহমদ ও এডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তাঁরা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এ ঘটনায় আসামি হওয়াদের বিনা খরচে আইনী সুবিধা দেয়ার কথা ঘোষণা করেন আইনজীবীরা।

এছাড়া পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য দাবী জানান। এসময় প্রতিনিধিদলে ছিলেন, এডভোকেট নাছির উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট কাশেম চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, এডভোকেট ফরিদ আহমেদ।

মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় বৈঠক :

শুক্রবার গণ্ডামারার মুজিব কিল্লার (ঘটনাস্থল) সমাবেশে (গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে) প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনায় আসা বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর পাঁচলাইশস্থ বাসার বৈঠকে যোগদেন গন্ডামারা ও সরলের শতাধিক মানুষ। এসময় লোকজন চলমান আন্দোলন ও জনগণের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে তাঁর সহযোগিতা চান।

প্রসঙ্গত: গত সোমবার গণ্ডামারা ইউনিয়নের হাজীপাড়া স্কুল মাঠে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে সমাবেশ আহবান করেন স্থানীয়রা। কিন্তু সমাবেশ শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে স্থানীয় এমপির পক্ষে মাইকিং করে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয় অপরপক্ষ। একই স্থানে দুটি সমাবেশের ডাক দেওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টির শঙ্কায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এ সময় চরম উত্তেজনার এক পর্যায়ে পুলিশ ও জনতা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত ও অর্ধশত মানুষ আহত হন, গ্রেফতার করা হয় পাঁচজনকে। তাছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও সরকারি লোকজনের ওপর হামলার ঘটনায় বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাহার মিয়া বাদী হয়ে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ ও প্রায় ৩২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করা হয়। আর নিহত দুই সহোদর ও জামাতার পরিবারের পক্ষে মাওলানা বশির আহমদ বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৪০০ থেকে ১৫০০ জনকে আসামি করে একটি এবং নিহত জাকের আহমদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে প্রায় ১৮০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এমএম/এএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!