বাঁশখালীর আলোচিত ২৪ মামলার আসামি চেয়ারম্যান লিয়াকত কারাগারে

অস্ত্র মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে বাঁশখালীর আলোচিত ২৪ মামলার পলাতক আসামি গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক গোলাম কবির এ আদেশ দেন।

জানা গেছে, বাঁশখালী থানার চার্জগঠন করা ২০১৭ সালের এক অস্ত্র মামলাসহ বহু মামলায় দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক থাকলেও প্রকাশ্যে চলাফেরা করতেন এই চেয়ারম্যান।

আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর দীন মণি বলেন, ‘লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় চার্জগঠন করা হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। বাঁশখালী থানার অস্ত্র মামলাটি প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলমান ছিল। ওই আদালতের অনুপস্থিতিতে আজ পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।’

উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী রাষ্ট্রের ভয়াবহ অপরাধে জড়িত বিভিন্ন ঘটনার ২৪ মামলার আসামি এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হলেও বাঁশখালীতে চলমান কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বহুমুখী কাজে তার প্রধান দায়িত্ব রয়েছে। ওই প্রকল্পের বহুমুখী প্রকল্পে কমিশন বাণিজ্যে গত কয়েকমাসে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার অস্ত্রের দাপটে আওয়ামীলীগ নেতারা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় ভিড়তে পারতেন না। মাত্র গত ৩ মাসে বাঁশখালীর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি করে তার নামে, স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তারের নামে ও দেহরক্ষী আবু আহম্মদের নামে ২ হাজার ৮০০ শতক জমি কিনেছেন কাথরিয়া ও সরল ইউনিয়ন থেকে। এছাড়া পাজারো গাড়ি, ফ্ল্যাট ও বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। আসামি হলেও প্রকাশ্যে ঘুরছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী থানা, বাঁশখালী আদালত, সীতাকুণ্ড থানা, কোতোয়ালী থানা, বাকলিয়া থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৯৯৪ সাল থেকে পৃথক পৃথক ভাবে ৯জনকে হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহীতা, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক উৎপাদনকারী আইন, নাশকতার ঘটনা, চেক জালিয়াতিসহ ২৪টি মামলা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়ায় ২০১৮ সালের জুন মাসে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন এবং বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ব্যক্তিগত সচিব ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলামও মামলা করে তাকে কিছুই করতে পারেনি।

বাঁশখালীর বেশ কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতাদের অভিযোগ, বাঁশখালীর গণ্ডামারায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় তিনি বিরোধিতা করেন। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিলে এ নিয়ে সংঘর্ষে ৪ জনকে গুলি করে হত্যা এবং ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মাসে আরও একজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর প্রচার হয় কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে অবস্থান করেন। তখন থেকে বহু মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরার সুযোগ পান তিনি। লিয়াকত বিএনপি নেতা হলেও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা বিরোধিতা করেও তাকে কাবু করতে পারেনি। পুলিশও তাকে গ্রেপ্তার করে না। এ প্রভাব কাটিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় গত ২০১৭ সালের ২৫ মে গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি হওয়ায় একবারের জন্যও উপজেলা আইনশৃংখলা সভা ও উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থিত হতে পারেন নি। পরপর ৩ সভায় অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার নিয়ম থাকলেও ৩৪ মাস অনুপস্থিতিতেও প্রশাসন তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করেনি, এমন কী শো-কজও করেনি। পলাতক অবস্থায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে সরকারি কাজ আদায় করেন।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত ) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা আছে। শুনেছি তিনি অস্ত্র মামলায় জামিন নিতে গিয়ে জামিন নামঞ্জুর হয়ে এখন কারাগারে।’

বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, ‘চেয়ারম্যান লিয়াকত উপকূলীয় নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেই নিজেকে নায়ক সেজে বেড়াত। সন্ত্রাস সৃষ্টি করা ছাড়া তার মহৎ কোনো কাজ ছিল না।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার বলেন, ‘মাসিক উপজেলা সমন্বয় সভা ও আইনশৃংখলা সভায় অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদেরকে আগামী প্রত্যেক সভায় অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!