বাঁশখালীতে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক কুম্ভ মেলা

৫ ফেব্রুয়ারি ঋষি সম্মেলন

অশুভ শক্তির বিনাশ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন ঘটাতে চট্টগ্রামের শ্রীঙ্গন খ্যাত বাঁশখালীর ঋষিধামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ সনাতনী বিংশতম ধর্মীয় সমাবেশ কৃম্ভ মেলা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ৯ টায় বাঁশখালীর ঋষিধাম প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণিল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই মেলা।

প্রতিবারের মতো সব ধর্মের সমন্বয় সাধন, অভ্যাস ও বৈষম্যের মাহাত্ম্য সংসারে পীড়িত জীবকে শিক্ষা দেয়া এবং ধর্মজগতের কল্যাণসাধন, পরস্পরের মধ্যে সদ্ভাব আদান-প্রদানে অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করবে এবারের মেলা।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিংশতম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক দেবাশীষ পালিত।

বাঁশখালীতে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক কুম্ভ মেলা 1

বিংশতম আন্তর্জাতিক ঋষি কুম্ভ ও কুম্ভ মেলা উদযাপন পরিষদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পরী মহারাজের পৌরহিত্যে আসন্ন শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী চলবে কুম্ভমেলার ব্যাপক অনুষ্ঠান ও মাঙ্গলিক আয়োজনে দেশ-বিদেশের প্রায় ২০ লক্ষাধিক ভক্ত জনতার সমাবেশ ঘটবে এবারের মেলায়। প্রতিবারের মত এবারেও এই মেলায় অংশ নেবেন- দেশ-বিদেশের সাধারণ পর্যটকসহ সাধু সন্যাসী, ঋষিকুল ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব।

আগামী বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঋষিকুম্ভ মেলার মূল আকর্ষণ আন্তজার্তিক ঋষি সম্মেলন। এতে ভারত থেকে অংশ নেবেন- অনন্ত শ্রী বিভুষিত , স্বামী নীলমনি মহারাজ, আচার্য্য শ্রী গোপালকৃষ্ণ শাস্ত্রী মহারাজ, শ্রী অর্চ্চম কৃষ্ণদাস ব্রক্ষচারী। এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মঠ-মন্দিরের মহাত্মা মহারাজবৃন্দরা এই সম্মেলনে যোগ দেবেন। বিভিন্ন ‍দিনের অনুষ্ঠানসূচিতে এই মেলায় অংশ নেবেন রাষ্ট্রীয় অতিথিরা।

আয়োজকরা জানান, এই মেলায় দর্শনার্থী ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে সকাল-দুপুর ও সন্ধ্যা-রাত মোট ৪ শিফটে নিয়োজিত থাকবে প্রায় ৫ হাজার সেচ্ছাসেবক। এছাড়াও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক ২০০ পুলিশ সদস্য ছাড়াও নিয়োজিত থাকবে সাদা পোশাকের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

উল্লেখ্য, কুম্ভ মানে কলস। অমৃতের কলস। অমরত্ব লাভের আশায় একবার দেবতাদের সঙ্গে অসুরকুলের সমুদ্র মন্থন হয়েছিল। সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে এল বহু মূল্যবান সামগ্রী। উঠল একটি অমৃতের ভাণ্ড। অসুরদের এই অমৃতকুম্ভ না দেওয়ার জন্য দেবরাজ ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত এক সময় সেটি নিয়ে পালালেন। পালানোর সময় অমৃত ভাণ্ড ৪টি স্থানে রাখা হয়েছিল হরিদ্বার, প্রয়াগ, ত্রিম্বকেশ্বর-নাসিক ও উজ্জয়িনী।

কুম্ভ মেলা হিন্দু উৎসব। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা তীর্থ স্নান করতে ভারতে যান। বিশ্বের বৃহত্তম শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হিসাবে ২০১৩ সালে ভারতে ১০ কোটির বেশি মানুষের সমাগম হয়।

সাধারণ কুম্ভ মেলা প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়। প্রতি ৬ বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগে (প্রয়াগরাজ) অর্ধ কুম্ভ আয়োজিত হয়। প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণ কুম্ভ আয়োজিত হয়। বারোটি পূর্ণ কুম্ভ অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহা কুম্ভ।

প্রসংগত, যারা দূরদূরান্ত থেকে ভারতের এই চারটি স্থানে গিয়ে তীর্থ করতে অক্ষম, তাদের কথা বিবেচনা করে বাঁশখালী ঋষিধামের প্রতিষ্ঠাতা মোহন্ত শ্রীমৎ অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ১৯৫৭ সাল থেকে এখানে কুম্ভমেলার প্রবর্তন করেছিলেন। ভারতের ৪টি স্থানের যেকোনো একটি মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পর বাংলা মাঘ মাসের ত্রয়োদশী তিথিতে বাঁশখালীর ঋষিধামে কুম্ভ মেলা বসে।

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!