ইস্টার্ন ব্যাংকে ১৩ কোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেল দুদক

অভিনব কায়দায় গ্রাহককে ভুল বুঝিয়ে চেক ইস্যু ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) বিভিন্ন গ্রাহকের এফডিআরের ১৩ কোটি ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৩ টাকা আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) বহদ্দারহাট শাখায় অভিযান চালায় দুদক। এসময় দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ সহকারি পরিচালক হোসাইন শরীফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দুদকের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেন।

দুদক সুত্রে জানা যায়, ইস্টার্ন ব্যাংকের চট্টগ্রাম ওআর নিজাম রোড শাখার প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার ইফতেখারুল কবির গ্রাহককে ভুল বুঝিয়ে চেক ইস্যু ও তাতে স্বাক্ষর নিয়ে ১৩ কোটি ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৩ টাকা আত্মসাৎ করেন। কিন্তু বিষয়টি দুদক তফশিলভূক্ত হওয়ায় থানা কর্তৃপক্ষের জিডি এন্ট্রির মাধ্যমে এজাহারভুক্ত মামলাসমূহ দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ পাঠানো হয়েছে। আত্মসাতের ঘটনায় তিনটি অভিযোগ দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপসহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বহদ্দারহাট শাখায় অভিযান চালায় দুদক। এতে ব্যাংকের প্রয়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার ইফতেখারুল কবিরের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ৮ আগস্ট নগরের আগ্রাবাদ এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে ইফতেখারুল কবিরকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত ৭ আগস্ট ঢাকা প্রধান কার্যালয় থেকে একটি দল চট্টগ্রামে এসেই নগরের চকবাজার ও চান্দগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করার একদিন পর তার বিরুদ্ধে পর পর ১৩টি মামলা দায়ের করে ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

যেভাবে ঘটে অভিনব জালিয়াতি
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১২ জুন কনা দে নামের একজন গ্রাহক চট্টগ্রামের চান্দগাঁও শাখায় একটি এফডিআর (নম্বর ০০৭১৪৪০১১৫৫৪২) করেন। সাম্প্রতিক সময়ে কনা দে’র টাকার প্রয়োজন হলে তিনি ওই এফডিআরের বিপরীতে ঋণ সুবিধা নিতে ব্যাংকের ওআর নিজাম রোড শাখায় যোগাযোগ করলে তার এফডিআরের রশিদটি দেখে শাখা ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দীনের সন্দেহ হয়। এরপর ম্যানেজার ব্যাংকের রেকর্ড ফাইল দেখে এটি নকল এফডিআরের রশিদ বলে ওই গ্রাহককে জানান। তিনি রেকর্ড দেখে ওই গ্রাহককে জানান, ২০১৬ সালের ১২ জুন কনা দে’র নামে কোন এফডিআর ইস্যু হয়নি। এরপর ম্যানেজার কনা দে’র সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন এ এফডিআরটি করিয়েছেন ব্যাংকের প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ম্যানেজার ইফতেখারুল কবির। এতোদিন কনা দে’র টাকার প্রয়োজন না হওয়ায় এফডিআরের খোঁজখবর নেননি। তিন বছর পর হঠাৎ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় এফডিআরের বিপরীতে তিনি ঋণসুবিধা নিতে ব্যাংকে যান।

সূত্রে জানা গেছে, শুধু বেসরকারি ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংকের ওআর নিজাম শাখাতেই নয়, একই কায়দায় চান্দগাঁও শাখা থেকেও গ্রাহকের টাকা সরানো হয়েছে বলে ব্যাংকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে। এতে ওই দুই শাখার গ্রাহকের এফডিআর ও বিভিন্ন একাউন্ট থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে, শুধু ইফতেখারুল কবির নয়, এ ঘটনায় ইস্টার্ন ব্যাংকের আরও একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার জড়িত থাকার সম্ভাবনা দেখছেন তদন্ত দল।

আজাদ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!