বহদ্দারবাড়ি হঠাৎ উৎসবমুখর, লেগেই আছে মানুষের ভিড়

ছিমছাম দোতলা গোলাপি রঙের বাড়িতে লাল সবুজের প্যান্ডেলে চলছে ছাউনি তৈরি। এ কাজের ভেতরেও বাড়ির সহকারী ইব্রাহিম পাশের বনফুল বেকারি থেকে নিয়ে আসলেন মিষ্টির প্যাকেট। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের এই বহদ্দার বাড়িতে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকেই মানুষের উপচেপড়া ভীড়। কেউ ফুলের তোড়া, কেউ মিষ্টি, কেউ শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন বাড়িতে। আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করতেই ব্যতিব্যস্ত বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা।

দুইদিন আগেও যেখানে হাতেগোনা গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া কারও দেখা মিলতো না সেখানে প্রতিদিনই মানুষের উপচেপড়া ভীড়,। ফুলেল শুভেচ্ছায় মুখর বাড়ির উঠান। এই ছিমছাম দোতলা গোলাপি রঙের বহদ্দারবাড়ির বড় ছেলে রেজাউল করিম চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক। চট্টগ্রাম ৮ আসনের জন্য জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হন। এবারেও মেয়র পদে মনোনয়ন পাবেন না কিনা তা নিশ্চিত না হয়েও অভাবিতভাবে মনোনয়ন পেলেন ৫৩ বছরের রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবনে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এই রাজনীতিবিদ। আশা করে ছিলেন নেত্রীর দিকে। নেত্রীও আশাহত না করে চমকপ্রদভাবে দিয়ে দিলেন নৌকার বৈঠা। মনোনয়ন পাওয়ার খবর প্রচার হতেই মানুষের শুভেচ্ছায় ভাসছেন রেজাউলের পরিবারের সদস্যরা।

রোববার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছে শ্রমিকেরা। বাইরে দাঁড়িয়ে তার তদারকি করছেন রেজাউল করিমের ছোট ভাই নজরুল করিম চৌধুরী। কথা হয় তার সঙ্গে। বাইরে সাজসজ্জা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথেই মানুষের ভিড় লেগে আছে। তাদের বসার সুবিধার্থেই কুয়াশা কিংবা রোদে যাতে এলাকাবাসীর ঝামেলা না হয়, কষ্ট না হয় তার জন্যই এই ব্যবস্থা করা।

রেজাউল করিমের বাড়ির অন্দরমহল।
রেজাউল করিমের বাড়ির অন্দরমহল।

বড় ভাই মনোনয়ন পাওয়ার খবর কীভাবে পেলেন এমন প্রশ্ন করতেই বলেন, ‘প্রথমে টিভিতে জানতে পারি এই সুখবর। তারপর সবাই টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেন। সত্যিই আমরা খুশি। নেত্রীর কাছেও কৃতজ্ঞতা। এই নগরের মানুষের জন্য নিভৃতে কাজ করে গেছেন যে মানুষ, তাকে নেত্রী মূল্যায়ন করেছেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!’

রেজাউল করিমের সেজ ভাই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মো.কামরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘কাল রাত থেকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আগ্রহ প্রকাশ করছে উনার সাথে কাজ করবে বলে। খুশিতে মানুষ বাড়িতে আসছে। এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করছে। সত্যিই ভাল মানুষ যদি থেকে থাকে, ওনার নামটাই প্রথমে আসবে।’

বাড়ির ভেতরে যেতেই দেখা যায় তিন জন মুক্তিযোদ্ধা ফুলের তোড়া নিয়ে সদ্য মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিমের বাড়িতে এসেছেন শুভেচ্ছা জানাতে। জানতে চাইছেন এম রেজাউল করিমের চট্টগ্রামে ফেরার সময়। সে সময় কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা ও পাঁচলাইশ থানার সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মানিকের সাথে।

রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রামের জন্য কিছু করতে পারবেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ পারবে। আমরা ওর পাশে আছি। আমার জীবন যৈবন তো গেছে গা, যা কিছু করতে হয় ওর (এম রেজাউল করিম) জন্য করবো আমরা। ও পারবে চট্টগ্রামের মান সম্মান রাখতে। ও সঠিক মানুষ।’

পাশে থাকা আরেক মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন মুন্সি এই কথার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের জন্য এর চেয়ে গর্বের আর কিছু হতে পারে না।’

এদিকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় রেজাউল করিমের স্ত্রী সেলিনা আক্তার চৌধুরী, তিন ছেলেমেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ভীষণ খুশি।

কথা প্রসঙ্গে সেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘উপনির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেছেন, আপনি সবার মধ্যে এক নম্বরে আছেন। বিভিন্ন কারণে এক নম্বর থাকার পরেও কিছু দিতে পারছি না বিধায় আপনাকে আমি দেখব। ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, রেজাউল তুমি চিন্তা করো না। ওটা তোমার কাছে আসবে। যে কোন একটা আসবে। প্রধানমন্ত্রীর নজরে পড়েছো একটা-না-একটা হবে।’

ব্যক্তি মানুষ হিসেবে রেজাউল কেমন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি খুবই ভালো মানুষ। উনার মত মানুষ হয় না। উনি বাচ্চাদের জন্য, ফ্যামিলির জন্য, আমার নিজের জন্য অন্যরকম একটা মানুষ। তাছাড়া রাজনীতির জন্য নিজের সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমার বিয়ের বয়স ৩৪ বছর। সারাক্ষণ দেখতাম রাজনীতি নিয়ে পড়েছিল। এলাকার মানুষ সবাই খুব পছন্দ করেন তাকে।’

রেজাউল করিমের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে তানজিনা শারমিন নিপুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ প্রোগ্রামে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। আরেক মেয়ে সাবরিনা তানিম বলেন, ‘টিভির চ্যানেল স্ক্রল করতে করতে খবরে দেখতে পাই সুখবর। তাতে পরিবারের সাথে আমিও ভীষণ খুশি। বাবার এমন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়নে আমরা সবাই খুশি।’

শুভেচ্ছা জানাতে আসা চান্দগাঁও থানার ছাত্রলীগ সভাপতি নুর নবী শাহেদ বলেন, ‘উনার মতন এতো পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কম আছেন। নেত্রীকে ধন্যবাদ জানাই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। এই নগরের উন্নয়নে রেজাউল ভাই যোগ্য একজন প্রার্থী।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!