বলাৎকার কাণ্ডে ধরা মাদ্রাসা শিক্ষক মিজান চট্টগ্রাম কলেজের ‘ছাত্রলীগ নেতা’!

একসময় ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের দাপুটে নেতা, চট্টগ্রাম কলেজসহ ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথেও ছিলো দারুন ভাবসাব। কলেজ রাজনীতিতে নাম কামানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম কলেজে ‘বিশ্ব প্রেমিক’ হিসেবেও ছিলো তার পরিচিতি, একাধিক প্রেমিকার সাথে কলেজের নির্জন জায়গায় বসে প্রেম করতেও দেখা যেতো এই ছাত্রলীগ নেতাকে। তবে চট্টগ্রাম কলেজের কমিটিতে বাদ পড়ে যায় তার নাম। কমিটিতে না থাকলেও রাজনীতিতে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী হিসেবে মাঠে ছিলেন তিনি।

এই ‘তিনি’ বলাৎকারের দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন পাক পাঞ্জাতন হেফজ ও এতিমখানার শিক্ষক এম মিজানুর রহমান (২৪)। ১৯ মে (বুধবার) এগারো বছরের শিশু সুমন আলীর বাবা অভিযুক্ত মিজানকে মেরে থানায় পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন।

মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি মিজান চট্টগ্রাম কলেজে ইতিহাস বিভাগের অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্র। রাজনীতিতে মিজান চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের একনিষ্ঠ কর্মী। নিজের নেতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মিজানকে সবুজের নামে বিভিন্ন সময় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিতেও দেখা যায়।

নিজ কর্মীর এমন ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ বলেন, ‘আমার কর্মী বলে পরিচয় দিলে তো আর আমার কর্মী হয়ে যায়নি। কলেজে ২৬ হাজার ছাত্র ছাত্রী রয়েছে এমন হলে সবাইকে আমার কর্মী বলতে হবে। অপরাধী অপরাধ করার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে। কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখানে আমার সাক্ষাৎ নেওয়ার তো কোনো কারণ দেখছি না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগে এসব কাজকর্মকে আগেও কখনো প্রশ্রয় দেয়নি আগামীতেও দিবে না।’

মিজানের এমন ঘটনায় রীতিমত তোলপাড় চলছে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্ররাজনীতে সম্পৃক্ত নেতা কর্মীসহ শিক্ষকদের মধ্যে। চট্টগ্রাম কলেজের মতো স্বনামধন্য একটি কলেজের ছাত্রের থেকে এমন ঘটনা অনাকাঙ্খিত এবং এতে কলেজের মান ক্ষুন্ন হয়েছে বলেও দাবি করছেন চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, মিজানের চরিত্র নিয়ে আগেও অনেক কথা উঠেছে, তাকে কলেজ ক্যাস্পাসেই একাধিক মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গভাবে দেখা গিয়েছিলো, কর্মীর ব্যাপারে সবুজকে একাধিকবার জানানো হলেও সে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। তখন যদি সে ব্যবস্থা নিতো তাহলে মিজান এমন জঘন্য কাজ করতে দুবার চিন্তা করত, তবে হঠাৎ করে মিজানের মাথায় বাচ্চা বলাৎকারের মত নিকৃষ্ট নেশা কিভাবে আসলো তা বুঝতে পারছি না।

অভিযুক্ত শিক্ষক আগেও মাদ্রাসার বিভিন্ন ছেলেকে বলাৎকার করেছে দাবি করে শিশুটির বাবা শুক্কুর আলী বলেন, ৭ মাস আগে ঐ মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মিজানুর রহমান। যোগদানের পর থেকেই মিজান বিভিন্নভাবে বাচ্চাদের বলাৎকার করত। এর আগেও কয়েকবার বলাৎকার শিকার হয়েছে তার ছেলেটি। পরশু রাতেও একই ঘটনা ঘটে। সকালে আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি চলে গিয়ে আমাকে সব খুলে বলে।

অভিযুক্ত মিজানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা গঠন করে তাকে আদালতে প্রেরন করে বলে নিশ্চিত করে বায়েজিদ থানার পরিদর্শক(তদন্ত) খায়রুল ইসলাম।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!