বলাৎকারের শিকার বোবা শিশু চমেক হাসপাতালে, মামলাই নেয়নি পুলিশ

‘নিজেরা নিজেরা মীমাংসা’ করে নিতে এসআইয়ের চাপ

মসজিদে যাওয়ার পথে বখাটের হাতে বলাৎকারের শিকার হয় বাকপ্রতিবন্ধী এক ছেলেশিশু। ঘটনার ছয় দিন পর অসহায় ওই শিশুর পরিবারকে মীমাংসা করে নিতে চাপ দিচ্ছে পুলিশই— এমন অভিযোগ মিলেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়।
গুরুতর আহত সেই শিশু এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণাকাতর দিন কাটাচ্ছে। অথচ এমন গুরুতর ঘটনায় মামলাও রেকর্ড করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। উল্টো বুধবার থানার গোলঘরে ডেকেছেন মীমাংসার ‘বৈঠক’।

জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ৭ নম্বর ওয়ার্ড বকশীরখীল এলাকায় বলাৎকারের শিকার হয় ১৫ বছর বয়সী এক বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেশিশু। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত বখাটে দেলোয়ার হোসেন (৩৫)। দেলোয়ার ওই এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে। এদিকে ঘটনার ছয়দিন পর গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) বলাৎকারের এই ঘটনা ‘নিজেরা নিজেরা মীমাংসা’ করে নিতে পুলিশ চাপাচাপি করতে গেলে ঘটনাটির কথা লোকমুখে জানাজানি হয়।

ওই শিশুর পরিবার জানায়, গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায়ও বাকপ্রতিবন্ধী ওই ছেলেশিশু বাড়ি ফিরে না আসায় তার খোঁজে বের হয় পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে শিশুটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এরপর প্রথমে তাকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক এবং পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে শিশুটিকে চমেক হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে।

এদিকে শিশুটির পরিবার আক্ষেপ করে বলেছে, এ ঘটনায় ছেলের মা সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টো উভয়পক্ষকে বিষয়টি মীমাংসা করতে চাপ দিচ্ছেন অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সাতকানিয়া থানার এসআই অনুপম শীল। শুধু চাপই নয়, বুধবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল চারটায় থানার গোলঘরে বৈঠকেরও ডাক দিয়েছেন এসআই অনুপম।

এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া থানার এসআই অনুপম বলেন, ‘এটি মামলা কিংবা আইনের আওতায় আনার মতো কোনো ঘটনা নয়। তাছাড়া অভিযোগে আসামি ম্যানশন করা নেই। প্রকৃত আসামি কে— সেটা ছেলে এবং ছেলের মা কেউ চিহ্নিত করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আর যে ছেলেটা বলাৎকার করেছে বলা হচ্ছে, এলাকার লোকজন বলেছে ওই দেলোয়ার নিরীহ লোক।’

এসআই অনুপম শীলের বক্তব্যের বিষয়ে ছেলের চাচার বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমরা যদি ম্যানশন না করি তাহলে পুলিশ বলাৎকারের মামলা রেকর্ড বাবদ প্রথমে ২০ হাজার এবং পরে ১০ হাজার টাকা কেমনে খুঁজেছে? আর কেমনে উভয়পক্ষকে আগামী বুধবারে (১৮ নভেম্বর) থানায় ডেকেছেন?’

এসআই অনুপমের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন্নাহার রুমির আদালত ১৫৮/২০২০ নামীয় একটি মামলা থানাকে রেকর্ড করার নির্দেশ দিলে সেই মামলা রেকর্ড করার দায়িত্ব পান এসআই অনুপম। কিন্তু মামলা রেকর্ড হওয়ার পর আসামি মহিলা— এই অজুহাত দেখিয়ে তিনি আসামি গ্রেপ্তারে সরাসরি অপারগতা জানান।

ওই মামলার বাদী সোনাকানিয়ার কুতুবপাড়ার মোজাফ্ফর বলেন, ‘তার এই কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি ওসি সাহেবকেও জানিয়েছিলাম। পরে এসআই অনুপম সত্যি সত্যি আর গ্রেপ্তার না করে তাদেরকে কল করে জামিন নিয়ে আসার পরামর্শ দেন।’

এদিকে চরতীর ৬ নং ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তোফায়েল আহমদও একইরকম অভিযোগ তুলেছেন এসআই অনুপমের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘আমার পৈতৃক মালিকানাধীন একটি পাহাড় কাটার বিষয়ে সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। ওই অভিযোগের তদন্তভার পান এসআই অনুপম। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!