বন্ধ হচ্ছে সোনার বাংলা ট্রেন, যাত্রী কম সুবর্ণ এক্সপ্রেসেও

সোনার বাংলা ও উপকূল এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। শনিবার (২০ জুন) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আরও কয়েকটি ট্রেনের সঙ্গে এই দুটি ট্রেনও স্বল্প পরিসরে চালু করা হয়েছিল। এছাড়া সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রীসংখ্যাও কমছে দিনের পর দিন। সূবর্ণ এক্সপ্রেসেরও কি সোনার বাংলার দশা হবে— এ নিয়েও তৈরি হয়েছে আশঙ্কা।

বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, যাত্রী না থাকা, লোকসান ও কম টিকেট বিক্রি।

অন্যদিকে যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, কোনো প্রচারণা ছাড়াই টিকেট বিক্রি করা হচ্ছিল অনলাইনে। নিয়মকানুনও জানেন না অনেকে। এ কারণে টিকিটের বিক্রি কম। এছাড়া ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন না থামার কারণে যাত্রীদের অনেকে আগ্রহ হারিয়েছেন।

এমন অবস্থায় শনিবার (২০ জুন) থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা সোনার বাংলা ট্রেন ও ঢাকা-নোয়াখালী উপকূল এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে যাবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পূর্ব) ওমর ফারুক।

গত তিন দিনে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট বিক্রির চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সোমবার (১৫ জুন) সোনার বাংলায় টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৭২টি, মোট সিট ২৯৭টি। মেঘনা এক্সপ্রেসে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩৪৪টি, সেখানে সিট আছে ৪৬৪টি। উদয়ন এক্সপ্রেসে সিট আছে ৩১৮টি, টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৪৯টি।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ৪৫৪টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৮৩টি। মেঘনা এক্সপ্রেসে ৪৬৪টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩২৬টি। উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩১৮টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ২১৬টি।

সর্বশেষ বুধবার (১৭ জুন) সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ৪৫৪টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ১৩২টি। সোনার বাংলায় ২৯৭টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯২টি। মেঘনা এক্সপ্রেসে ৪৬৪টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩৩১টি। উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩১৮টি সিটের বিপরীতে টিকিট বিক্রি হয়েছে ২৪০টি।

সোনার বাংলায় এভাবে অস্বাভাবিক যাত্রী কমে পাওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে অনেক যাত্রী বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরে স্টপেজ তুলে দেওয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া অর্ধেকেরও বেশি যাত্রী বিমানবন্দর স্টেশনে নামেন।

যাত্রী কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম রেলের স্টেশনমাস্টার জাফর আহমেদও।

সোনারবাংলা ট্রেনের ঢাকামুখী যাত্রী রাফি হায়দার বলেন, ‘অনলাইন টিকেট বিক্রির ফলে অনেক যাত্রীই টিকেট কাটতে পারেন না নিয়ম জানা না থাকায়। অনেকে আবার অনলাইনেও অভ্যস্ত নন। ফলে এদের অনেকেই ঝামেলা এড়াতে রেলপথ ছেড়ে সড়কপথে যাতায়াত করছেন।’

তবে পূর্ব রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনসার আলী বলেন, ‘আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে চাঁদপুর ও সিলেটের ট্রেনে টিকেট বেশি যাচ্ছে। তাহলে মানুষ অনলাইন সচেতন নয়— এটা কিভাবে বলা যায়?’

পাপিয়া সুলতানা টিসা নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমি দোকানে গিয়ে অনলাইনে টিকেট কাটতে অতিরিক্ত ৭৫ টাকা খরচ দিয়েছি। নিউমাকেট মোড় থেকে টিকেট সংগ্রহ করেছি।’

পূর্ব রেলের বিভাগীয় প্রধান কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপদ রাখতে অনলাইনে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিকেট কালোবাজারি রোধের বিষয়টিও সেখানে জড়িত। এনআইডি কার্ড সিস্টেম ব্যবহার করে কালোবাজারি রোধ করার পরিকল্পনাও রেল ভবনের রয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!