বন্দিদের খেতে দিতো পানির বদলে প্রস্রাব! টর্চার সেলে নির্যাতনের শিকার ও মৃত্যু

রাজীব সেন প্রিন্স : বিশেষ প্রতিনিধি ::

 

ডালিম ভবনের টর্চার সেলে বন্দীদের নিয়মিত কিছু খেতে দিতো না। মাঝে মাঝে তাদের বেগুনের ঝোল, মাছের কাঁটা আর গোশতের আলু দিয়ে সিদ্ধ চালের ভাত এবং নরপশুদের খেয়ে বেঁচে যাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার।

 

অতি মাত্রায় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কেউ ক্লান্ত হয়ে পানির পিপাসা মেঠাতে পানি চাইলে রাজাকাররা তাদের মুখের ওপর প্রস্রাব করে দিত। অনকেই পানির পিপাসায় জীবন দিয়েছে তবুও পানি চাইনি।49

 

টর্চার সেলে মৃত্যু : ডালিম ভবনে নির্যাতনের শিকার হয়ে টর্চার সেলেই মারা গেছেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হান্নান বেগমের চাচাত ভাই সন্দ্বীপের জসীম উদ্দিন। মৃত্যুর পর তার লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছিল নদীতে ফলে পাওয়া যায়নি তার লাশ।

 

গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করার অপরাধে চট্টগ্রাম শহরের রথের পুকুর পাড় এলাকার টাইপ রাইটার রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপে কর্মরত টাইপিস্ট ৫০ বছর বয়স্ক জীবনকৃঞ্চ শীলকে তুলে এনেছিলো ডালিম হোটেলে। তাকে ক্রমাগত এক সপ্তাহ টর্চার চেম্বারে নানান নৃশংসতা চালিয়ে সাইফুদ্দিন খানের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

 

মুক্তিযুদ্ধের পর তার পরিবার তার খোঁজে ছবিসহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে সাইফুদ্দিন খান জীবনকৃঞ্চ শীলকে চিনতে পারেন। এছাড়া সাইফুদ্দিন খানকে কারাগারে পাঠানোর দুদিন আগে লাশ হয়ে মেঝেতে এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেছে। জল্লাদখানায় মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় রঞ্জিত দাস ওরফে লাতু, প্রদীপ দাসসহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে।

 

অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হওয়াদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন মো. ওমর উল ইসলাম চৌধুরী, লুৎফুর রহমান ফারুক, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খান, আবদুল জব্বার মেম্বার, হারুন অর রশীদ খান, মোঃ সানাউল্লাহ চৌধুরী, নূরুল কুদ্দস, সৈয়দ মো. এমরান, মো. জাকারিয়া, জসিম, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রাজু, সুনীল কান্তি বর্ধন প্রকাশ দুলাল, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন। এদের কাউকে কাউকে হত্যা করে লাশ পর্যন্তও গুম করে ফেলা হয়েছে।

 
ফাঁসির রায় বহাল রাখার ঘোষণা আসার পর টর্চার সেলে নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খানের মেয়ে সাংবাদিক সুমী খান বলেন, ‘বাবার ওপর অমানুষিক যে নির্যাতন করা হয়েছিল ৪৩ বছর ধরে বুকে সেই ক্ষতের আগুন জ্বলছে। বদর নেতার ফাঁসির দণ্ডাদেশ হওয়ায় আমার মতো মুক্তিযোদ্ধার সপক্ষের শক্তি এবং স্বজন হারানো মানুষগুলো বিচার পেয়েছে।

 

রিপোর্ট : রাজীব সেন প্রিন্স

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!