বন্দর সিবিএর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, কর্মচারীদের অসন্তোষ

মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির। মেয়াদ শেষ হওয়ার একমাস আগে কমিটি বিলুপ্ত করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও সেটি করেনি মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যকরী পরিষদ। ট্রেড ইউনিয়নের ধারা পালনের কোন বালাই নেই মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যকরী কমিটির মধ্যে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের একমাত্র রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন। ওই ট্রেড ইউনিয়ন দেশের শ্রম আইন ও অনুমোদিত সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৩ আগস্ট। ট্রেড ইউনিয়নের সংবিধানের ২৪ ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে গোপন ব্যালটে নির্বাচন করার জন্য বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কার্যকরী পরিষদ। কার্যকরী পরিষদ আজ পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা না করায় ইউনিয়নের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতারা কৌশলে নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন বন্দরের নিজস্ব চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় অনুসারে দুই বছর পর পর চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এটি হলে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। কোন শ্রমিক অসন্তোষ থাকবে না। বন্দরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা যাবে।’

জানা যায়, ২০০৭ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএতে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করে আনার প্রতিযোগিতা ছিল একাধিক রাজনীতিবিদদের মধ্যে। সেনা সমর্থিত ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, বামপন্থীসহ পাঁচটি রেজিস্টার্ড সংগঠন ছিল। সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন সরকার বন্দর সংস্কারের অংশ হিসেবে সব সংগঠন ভেঙে একটি শ্রমিক সংগঠন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।

এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১০ সালে একটি মাত্র রেজিস্টার্ড সিবিএ’র অধীনে প্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হয়। সে সময় সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর দেওয়া কমিটিই সিবিএ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পায়। এর পর ২০১০ সালে কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও ওয়াহিদ উল্লাহ সরকার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। দুই বছর মেয়াদের কমিটি তখন সাত বছর পার করে দেয়। এর পর শ্রমিকদের আন্দোলন ও চাপের মুখে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বন্দর কর্মচারী পরিষদ গঠনের পর সেটি ছিল প্রথম সরাসরি নির্বাচন। তখন নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

সেই নির্বাচনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সমর্থিত মনছুর-ফখরুল প্যানেল ২৫ পদের মধ্যে সভাপতি, কার্যকরী সভাপতিসহ সবচে গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি পদে জয়ী হয়েছিল। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সিকদার-রফিউদ্দিন প্যানেলের রফিউদ্দিন খান। এমপি লতিফ সমর্থিত বাদল-সালাউদ্দিন প্যানেল থেকে দুজন নির্বাচিত হন। এ ছাড়া চারজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হন।

ট্রেড ইউনিয়নের ধারা ২৪ অনুযায়ী, প্রতি দুই বছরের মধ্যে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে কার্যকরী পরিষদ গঠন হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৩০ দিন পূর্বে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না এমন সদস্য বা নিরপেক্ষ ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি নির্বাচন উপ-পরিষদ গঠিত হবে। পরিষদ নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করবে। এ ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাতদিন আগে তারিখ ও স্থান উল্লেখ করে বিভাগীয় শ্রম পরিচালকের দপ্তরে জানাতে হবে। কিন্তু এর কোনো কিছুই করা হয়নি।

জানা যায়, এ অবস্থায় নির্বাচন আয়োজন করার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালকের দ্বারস্থ হয়েছেন ইউনিয়নের সাধারণ সদস্যগণ। গত ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন তারা। এতে এ যাবৎ নির্বাচনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট অসন্তোষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে নির্বাচন উপ-পরিষদ গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে গোপন ব্যালটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে সিবিএ সভাপতি আবুল মনছুর আহমদ কালের চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ বলতে কিছু নেই। যত দিন নির্বাচন হবে না; তত দিন মেয়াদ। সব কিছু আইন দিয়ে চলে না। সরকার চাইতে হবে, কমিটি চাইতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নের ধারা কেউ মানে না। আগে একটানা আট বছর একই কমিটি ছিল।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বন্দর চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে বলে দিয়েছেন, ‘‘ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন সংক্রান্ত কোন কাজ করা যাবে না। যা করতে হবে ডিসেম্বরের পরে।’’ তাই বর্তমানে আমরা হোম ওয়ার্ক করছি।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!