বন্দর-পতেঙ্গার ৪০ স্পটে জুয়ার রমরমা, থানার বাণিজ্য ৫ কোটি!

চট্টগ্রাম নগরের বন্দর, পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে চলে রমরমা জুয়ার আসর। জানা গেছে, তিনটি থানা এলাকার অন্তত ৪০টি স্পটে চলছে জুয়ার খেলা। প্রতিটি জুয়ার ঘর থেকে থানা মাসিক মাসোহারা নিচ্ছে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ক্যাশিয়াররা পৃথকভাবে জুয়ার ঘর থেকে বাণিজ্য করে মাসিক প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়; জুয়ার ঘর থেকে মাসিক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মাসোহারা নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও। এই চাঁদার অংশ থেকে বাদ পড়ছেন না কথিত সাংবাদিক, স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতারাও।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট থানার ক্যাশিয়ারের মাধ্যমে চুক্তি মোতাবেক জুয়ার ঘরের টাকা কালেকশান করা হয়। এ জুয়ার ঘর থেকে আলাদাভাবে থানার প্রতিজন এসআই ৫০০ ও এএসআই ৩০০ টাকা নিচ্ছেন। এছাড়া চাঁদার ভাগ পান কথিত সাংবাদিক ও স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতারা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ইপিজেডে ২৫টি, বন্দরে ১০টি এবং পতেঙ্গা থানা এলাকায় রয়েছে ৫টি জুয়ার ঘর। সকাল-রাত পর্যন্ত চলা জুয়া খেলার একটি অংশ হচ্ছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও আরেকটি অংশ হচ্ছে কর্ণফুলী ও সিইপিজেডের পোশাক শ্রমিক। অধিকাংশ জুয়ার আসর দিনের চেয়ে রাতের বেলায় জমজমাট হয়।

চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় জুয়ার আসর।
চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় জুয়ার আসর।

স্থানীয়রা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, থানাকে মাসিক মোটা অংকের টাকা দিলেই মেলে জুয়ার ঘরের ‘অনুমোদন’। প্রতিটি আসর থেকে থানার ক্যাশিয়ার এসেই টাকা নিয়ে যায়। মাঝে প্রশাসনের ঝটিকা অভিযানের পর কয়েকদিন বন্ধ থাকে জুয়ার ঘর। থানাকে আগের চুক্তির দ্বিগুণ টাকা দিয়ে বন্ধ হওয়া জুয়ার ঘরগুলো আবার চালু হয়।

জানা যায়, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থানার ধুমপাড়া এলাকার মোজাফফর বিল্ডিংয়ে জুয়ার আসরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী হাসানের নেতৃত্বে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় ৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জরিমানা এবং ২৬ জন জুয়াড়িকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গত ৮ মার্চ পতেঙ্গায় একটি জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে ৪১ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। আটকদের বেশিরভাগকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সূত্র বলছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললে কিছুদিন জুয়ার আসরগুলো বন্ধ থাকে। তবে বন্ধ হলে থানারই লাভ। আগের চুক্তির দ্বিগুণ টাকা দিয়ে থানার ‘অনুমোদন’ নিতে হয় জুয়ার ঘর।

এ বিষয়ে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জুয়ার আসর বন্ধ করা হয়েছে। এখন নেই। খোঁজ পেলে আবারও অভিযান চালাবো।’

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর নুরুল হুদা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জুয়ার ঘর ছিল। বর্তমানে কোনো জুয়ার আসর নেই। এরপরও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি জুয়ার ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন নেই।’

নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর জোন) হামিদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় জুয়ার আসরে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে বেশ কয়েকজন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে মামলাও দেওয়া হয়। আমি সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে এ বিষয়ে জোরালোভাবে নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি কয়েকটি এলাকায় আমার ভিজিটিং কার্ড দেওয়া হয়েছে জুয়ার আসর বসলে জানানোর জন্য।’

এএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!