বন্দর থেকে কন্টেইনার গায়েবের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েকশত কন্টেইনার গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এবার তৎপর হয়ে উঠেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ২২ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো এক চিঠিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এজেন্টসহ দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলেও বন্দর কিংবা কাস্টম কর্তৃপক্ষ কারো কাছেই মিলছে না সন্তোষজনক জবাব। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণেই কন্টেইনার গায়েবের ঘটনা ঘটেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত আমদানিকারক কর্তৃক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৯৫ কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। কাস্টম বিভাগের কাছ থেকে ২৯৫টি কন্টেইনার পণ্যের বিল অব লেডিংয়ের বিপরীতে কন্টেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থান করছে। অথচ আমদানিকারকরা উক্ত কন্টেইনারগুলো বন্দর থেকে খালাসের উদ্দেশ্যে কোন বিল অব এন্ট্রি করেনি।

নিয়ম অনুযায়ী পণ্য বন্দরে আসার ৩০ দিনের মধ্যে বিল এব এন্ট্রি জমা দিয়ে পণ্য খালাসের বিধান রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব পণ্য খালাস না হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ পণ্যবাহী ২৯৫টি কন্টেইনার কী অবস্থায় আছে তার তথ্য পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর কাস্টম হাউজের দেওয়া ওই চিঠি অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিউত্তরে কন্টেইনারগুলোর সার্বিক অবস্থান তুলে ধরে।

সে সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে- বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ৬৬টি, অকশনের মাধ্যমে বিডারদের ডেলিভারি ৬টি, প্রাইভেট আইসিডিতে ডেলিভারি ১৪টি, বিভিন্ন জাহাজে রিটেইন অন বোর্ড (কাগজপত্র ঠিক না থাকলে বা ডেঞ্জার নেভি পারমিশন না দেওয়ায় কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামিয়ে ফেরত) ৮১টি, চট্টগ্রাম বন্দরে অবতরণ করেনি ৩টি, চট্টগ্রাম বন্দরে রক্ষিত আছে, যা অকশন করার লক্ষে আ/এল এর মাধ্যমে কাস্টমস এর নিকট হস্তান্তরিত ১২৫টি কন্টেইনার।

চিঠিতে বলা হয় ৮১ কন্টেইনার পণ্য জাহাজে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ৮১ কন্টেইনার পণ্য কেন ফেরত গেলো তার কারণ জানার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে পুনরায় চিঠি দেওয়া হবে।

ওই চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় না থাকা এবং মাসিক কোন সভা না করার কারণে এই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। নথিতে থাকলেও বন্দর থেকে কয়েকশ কন্টেইনার গায়েবের বিষয়ে কাস্টমস এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

কয়েকশ কন্টেইনার গায়েবের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এজেন্টসহ দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সদ্য বিদায়ী কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কেউই সাড়া দেননি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!