বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহ/ লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা!

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনিতে প্রকল্পটি গ্রহণ করার পর বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে দেখা দিয়েছিলো চরম অসন্তোষ তার উপর নানা জটিলতায় এই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কী না তা নিয়ে সংশয় খোদ বন্দর কর্তৃপক্ষের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গেলে লালদিয়ারচরে বসবাসরতদের উচ্ছেদ করতে হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ভিড়ে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে ভেতরে ভেতরে বন্দর কর্তৃপক্ষের একধরনের অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেছেন টার্মিনালটি নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০২২ সাল থেকে পুরোদমে কর্মক্ষম করতে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের একটি সূত্র জানায়, বন্দরের প্রায় সবকটি প্রকল্প রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত হলেও লালদিয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বিদেশী অর্থায়নে। আবার এই প্রকল্পটি বাস্তাবায়নের পর যে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে তাদেরও কিছু শর্ত থাকবে। সেই শর্তগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সূত্র জানায়, লালদিয়া মাল্টিপারপাস প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য পাঁচ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট মাল্টি পোর্ট অপারেটর- আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনোমিক জোন লিমিটেড, দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, ফ্রান্সের বোলোর, বেইজিংভিত্তিক চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক গ্লোবাল পোর্ট সার্ভিসেস। এই তালিকা থেকে প্রক্রিয়া শেষে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাবে যে কোন একটি প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বন্দরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, টার্মিনালটি কাজ শুরু করলে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু শর্ত থাকবে। এসব শর্তের অন্যতম একটি এই টার্মিনালে বছরে অন্তত তিন লাখ টিউজ কন্টেইনার হ্যান্ডেল হতে হবে। যদি এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব না হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ চট্টগ্রাম বন্দরকেই বহন করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ওই কর্মকর্তা জানান, পণ্যের কন্টেইনার কোথায় হ্যান্ডেল করা হবে তা একান্ত আমদানিকারকের এখতিয়ার। লালদিয়া টার্মিনাল বাস্তবায়ন হলে আমদানিকারক যদি ওই টার্মিনালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করতে রাজি না হয় তাহলে তার দায়ভার কেন বন্দর নেবে? এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টোইনার টার্মিনালসহ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান থাকায় এই মুহূর্তে ঝামেলাপুর্ণ লালদিয়া প্রকল্প নিয়ে এগুতে চাইছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক কর্মকর্তা প্রকল্পটিকে ঘিরে নানা অশ্চিয়তা দেখছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পের বড় বাধা লালদিয়ার চরে উচ্ছেদ অভিযান। কারণ প্রকল্পটি যে এলাকায় বাস্তবায়িত হবে সেই এলাকায় অন্তত ১৭শ পরিবারের বসবাস। এ পরিবারগুলো ইতোপুর্বে উচ্ছেদ হয়ে বসতি স্থাপন করে লালদিয়ার চরে। প্রকল্প এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের জন্য একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলে তারা যে কোন মুল্যে উচ্ছেদ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের সব রাজনৈতিক নেতা ওই এলাকায় অবৈধভাবে বসবাসরতদের পক্ষে আছেন। এই বাস্তবতায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ওই জয়গায় প্রকল্পের কাজ শুরু করা আদৌ সম্ভব কী না তা নিয়ে রয়েছে একধরনের অনিশ্চয়তা।

যদিও এই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় জন্য চট্টগ্রাম বন্দরেকে নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই আদেশের কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নিদের্শনা রয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (স্টেট) জিল্লুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে আদালতের রায়ের কপি এখনো আমরা পাইনি। রায়ের কপি পাওয়ার পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১১ মার্চ ক্যাবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স লালদিয়া প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। প্রথমদিকে এটাকে শুধু বাল্ক টার্মিনাল করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি নির্মাণের জন্য পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কোন একটি প্রতিষ্ঠান টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।
প্রকল্পটির পরিচালক চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মাহমুদুল হোসেন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকল্পটি নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি মোট এক হাজার মিটার দীর্ঘ স্থানজুড়ে পাঁচ জেটি এবং এক হাজার মিটার দৈর্ঘের এবং তিনশো মিটার প্রস্থের ব্যাকাপ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার ১৪ ও ১৫ নম্বর খালের মাঝামাঝি নির্মিত হবে লালদিয়া প্রকল্পটি। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে প্রকল্পটি ২০২১ সালে শেষ করে ২০২২ সাল থেকে কাজ শুরু করবে।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!