বন্দরে ফের কনটেইনারের চাপ, বাড়ছে জাহাজের গড় অবস্থানের সময়

বছরখানেক আগেও জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সরাসরি এসে পণ্য খালাস কিংবা জাহাজীকরণ করতো। গড় অবস্থান সময় নেমে এসেছিলো শূন্যের কোটায়। ঘূর্ণিঝড় ফণী, দুই ঈদ ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এখনও লেগেই আছে কনটেইনার জট।

কনটেইনার জটের পাশাপাাশি বাড়ছে বহির্নোঙ্গরে জাহাজের গড় অবস্থান সময়। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় শূন্য থেকে চার দিনে গিয়ে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল আটটা পর্যন্ত বন্দরে কনটেইনার রয়েছে ২০ ফুট সাইজের ৪৪ হাজার ৯৮৬টি। ৪৯ হাজার ১৮ কনটেইনার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বন্দরে অপারেশনাল কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ধারণক্ষমতার চেয়ে অন্তত ৩০ ভাগ কম থাকার কথা। সে হিসেবে বর্তমানে বন্দরে অন্তত ১২ হাজার কনটেইনার বেশি রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০ আগস্ট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৬ হাজার ১৯৯টি, ডেলিভারি হয় ৪ হাজার ৭৭০ কনটেইনার।

বন্দরে সবচেয়ে বেশি কনটেইনার ছিল ১৮ আগস্ট। ওইদিন সকাল আটটা পর্যন্ত কনটেইনার ছিল ৪৫ হাজার ৭৪৬টি।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১২ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়নি। ওইদিন কোনো কনটেইনারও ডেলিভারি হয়নি। ১৩ আগস্ট সকাল আটটা পর্যন্ত বন্দরের হিসাব অনুযায়ী কনটেইনার ছিল ৪১ হাজার ৬৫৪টি।

স্বাভাবিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ঈদের পর কনটেইনার ডেলিভারির সংখ্যা অনেক কমে যায়। ১২ আগস্ট সকাল আটটা পর্যন্ত ডেলিভারি হয় ৫৫৬টি, ১৪ আগস্ট ডেলিভারি হয় ১ হাজার ১৫২টি , ১৫ আগস্ট ডেলিভারি হয় এক হাজার ৫৫২টি, ১৬ আগস্ট ডেলিভারি হয় ১ হাজার ৪২৭টি, ১৭ আগস্ট ডেলিভারি হয় ২ হাজার ৩০৪টি, ১৮ আগস্ট ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ১৪৬টি, ১৯ আগস্ট ডেলিভারি হয় ৫ হাজার ২৪৮টি, এবং সর্বশেষ ২০ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেলিভারি হয় ৪ হাজার ৭৭০টি কনটেইনার।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের আগে ও পরে কয়েকদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি কম হয়েছে। অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ডেলিভারি দিতে প্রস্তুত থাকলেও অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর কাজ বন্ধ থাকার কারণে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর প্রভাব পড়ে কনটেইনার জট কিংবা বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কিংবা জাহাজীকরণে।

চট্টগ্রাম বন্দরের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এক বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। আগে যেখানে ৭-৮ দিন পর্যন্ত একটি জাহাজকে পণ্য খালাসের শিডিউল পাওয়ার জন্য বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করতে হতো, সেখানে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরসীমায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হতো। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা ফিরে আসে।

ওই কর্মকর্তা জানান, ঘুর্ণিঝড় ফণীর কারণে বন্দরের অপারেশনাল কাজ টানা ৩ দিন বন্ধ থাকার কারণে যে জটের সৃষ্টি হয়েছিল তার রেশ কোনভাবেই কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। ওই ঘটনার পর ঈদুল ফিতরের বন্ধ, টানা বৃষ্টিপাতে নগরে তীব্র যানজটে পণ্য পরিবহন বন্ধ এবং সর্বশেষ ঈদুল আজহায় কনটেইনার খালাস কমে যাওয়ায় কনটেইনার জটের পাশাপাশি বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজের গড় অবস্থান বেড়ে গেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজকে বার্থিং পেতে হলে গড়ে ৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় আছে ২০ থেকে ২২টি জাহাজ।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছে, জাহাজ কিংবা কনটেইনার জটের কারণে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সমুদ্রে জাহাজ অলস বসে থাকলে গুণতে হয় অতিরিক্ত চার্টার ফি, কনটেইনার ডেলিভারি না হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আমদানিকারক, শিপিং এজেন্টদেরও গুণতে হয় জরিমানা। জরিমানা শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় গ্রাহক পর্যায়ে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, ‌‘টানা বৃষ্টি, ঈদের ছুটির পণ্য ডেলিভারি কম হয়। সেই সাথে সময়মতো শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে বন্দরে কনটেইনার পড়ে থাকে। এতে আমদানিকারক, শিপিং এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ চায় তাদের অপারেশনাল কাজ সচল রাখতে। এক্ষেত্রে সব সেবা সংস্থার সমন্বয় না হলে পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়। নির্দিষ্ট সময়ে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কিংবা জাহাজীকরণ, কনটেইনার ডেলিভারি না হওয়ার যে মাসুল সেটি শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের বহন করতে হয়।’

চট্টগ্রাম বন্দর ইউজার্স ফোরাম এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদে পণ্য খালাস কমে যায়। এতে জটের সৃষ্টি হয়। এটি পার্ট অফ বিজনেস। এতে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দরের অপারেশনাল কাজ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সেবাও যাতে নিরবিচ্ছিন্ন থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

এসসি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!