বন্দরে জালিয়াতি ধরিয়ে দিয়ে বরখাস্ত প্রকৌশলী দুদকের দুয়ারে

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানা এলাকায় কয়লার ডিপোতে পাথর কম রাখার প্রতিবাদ করায় ইউসুফ ছালেহ নামে এক প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যূত হওয়ার ৩৮০ দিন পরও চাকরি ফিরে না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। ইউসুফ ছালেহ চট্টগ্রাম বন্দরের প্রকৌশল বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দুদকের গণশুনানিকালে বন্দর চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) ও গণশুনানি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এএফএম আমিনুল ইসলাম। একই সঙ্গে বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় অভিযুক্তকে অপেক্ষা করতে বলেন দুদক কর্মকর্তারা।

জানা যায়, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে শিকলবাহা থেকে ৫৪.২৮ ঘনমিটার, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩৭২.২৫ ঘনমিটার পাথরসহ মোট ৪২৬.৫৩ ঘনমিটার পাথর আনা হয়। সেখানে স্টক থাকার কথা ৩৬৩.১৪৭ ঘনমিটার পাথর। সেই সময় কয়লার ডিপোতে পাথর ছিল ১২৭.৫৩ ঘনমিটার পাথর কম। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ১২ লাখ ৩২০০ টাকা।

পাথর দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তরা ছিলেন হারবার শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল আলম, সহকারী প্রকৌশলী-১ এর সাবরিনা হক, উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী কেএম আব্দুর রাজ্জাক, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আজিজুল হক।

২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাথর চুরির ঘটনায় সিনিয়র অডিট অফিসার মো. আবদুল শাকুরকে আহবায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেই কমিটিও উল্টো দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ২৮ মে প্রকৌশলী ইউসুফ ছালেহকে সাময়িক বরখাস্ত করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের প্রবিধানমালা ৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ সম্পর্কে অব্যাহতি করার পর ১৮০ কর্মদিবসের মধ্যে এই প্রবিধানের অধীনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে, অভিযুক্তকে ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হতে আপনাআপনি অব্যাহতি পেয়েছেন বলে গণ্য হবে। এতে আরও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এইরূপ ব্যর্থতার জন্য দায়ী, তাকে ব্যাখ্যা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন। উক্ত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে তার বিরুদ্ধে অদক্ষতার দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে অভিযুক্ত ইউসুফ ছালেহকে ১৮০ কর্মদিবসের পরিবর্তে ৩৮০ কর্মদিবস অতিবাহিত হলেও এখনো বরখাস্ত থেকে অব্যাহতি দেয়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ১৮ মাস ধরে ডিউটি ছাড়া কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলেও সেখানে কোন ছুটির ব্যবস্থা নেই তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও তাকে উপস্থিত থাকতে হয় প্রতি কর্মদিবসে।

জানতে চাইলে ইউসুফ ছালেহ বলেন, অসহায় হয়ে এখন দুদক শুনানিতে এসব অভিযোগ দিয়েছি। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। প্রতিবাদই আমার কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম।

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!