বন্দরে চট্টগ্রামের লোক নিয়োগসহ ১০ দফা দাবি নাগরিক ফোরামের

চট্টগ্রাম বন্দরে লোক নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়াসহ ১০দফা দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম। রোববার (২১ মার্চ) বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবস্থ এস রহমান হলে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন এ দাবি করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হলেও এখানে চট্টগ্রামের লোককে বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয় না। বন্দরের নিয়োগ সমুহে চট্টগ্রামকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে ১০ দফা দাবি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে মেগা প্রকল্পের কাজ আগামী ২ বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা, ১৯৯৩-৯৭ সালে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক ঋণ সহায়তায় পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচে নির্মিত আগ্রাবাদের আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পঁচিশ ফুট প্রস্থ শেখ মুজিব রোড বক্স কালভার্ট (পাকা বড় ড্রেন) সংস্কার করে কালভার্টটি সচল করা, ১৯৯৫ সালের সংশোধিত মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত বিকল্প খাল অবিলম্বে তৈরি করা, সকল নালা-খাল-উপখাল নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার করা এবং এতে সরাসরি আবর্জনা ও পলিথিন বেগ নিক্ষেপকারীদর আদালতে নোটিশ দিয়ে বা স্পটে জরিমানার ব্যবস্থা করা।

এছাড়া আগামী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করা, চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সাবওয়ে অথবা ফুটব্রিজ নির্মাণ করা, সিটি কর্পোরেশন এর হোল্ডিং ট্যাক্স ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে নগরবাসীদের অযথা হয়রানি ও অযোক্তিক ট্যাক্স বৃদ্ধি করা থেকে বিরত থাকা প্রস্তাব করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

নিয়মিত মশা নিধনের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রয়োজনমতো প্রতিটি বাড়ি ঘরের আশপাশে ওষুধ ছিটানোর দাবি জানানো হয়। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনস্বাস্থ্য ও প্রকৃতিকে রক্ষা করতে অতিরিক্ত ধুয়া সৃষ্টিকারী ও পরিবেশ দূষণে সক্ষম সকল যানবাহন ও শিল্প কারখানার লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা ও অন্যান্য সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, আবাসিক ও বাণিজ্যিক বর্জ্যকে রি-সাইক্লিং করে সার ও জ্বালানি উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ, আধুনিক সুয়ারেজ ব্যবস্থার চালু করে সকল নদী, খাল ও উপখালকে দূষণ থেকে রক্ষা করা, বৈদ্যুতিক তারগুলিকে খুঁটি থেকে সরিয়ে নিরাপদ পদ্ধতিতে মাটির নিচে স্থাপন করা, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়।

চিকিৎসা ব্যাবস্থার উন্নয়ন কল্পে ৪ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারী উদ্যোগে অন্তত দুইটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের কমপক্ষে ১৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা। এছাড়া দক্ষিণ ও উত্তর চট্টগ্রামে দুইটি ৭০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালকে সম্পূর্ণ সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা, সরকারি ও সিটি কর্পোরেশন এর হেলথ কমপ্লেক্স ও সেন্টারগুলিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করে রোগি শয্যা, চিকৎসক ও নার্সের সংখ্যা বাড়ানো, এবং সরকারি ও আধা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একটি পৃথক ব্যাবস্থাপনার সৃষ্টি করা।

চট্টগ্রামের শিক্ষা খাতে উন্নয়নের জন্য ৩ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামে অন্তত ২টি পূর্ণাঙ্গ নতুন এবং আন্তর্জাতিক মানের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা, চট্টগ্রামের সকল সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাই স্কুলগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়ন করা, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধি করা এবং চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের সরকারি নার্সিং ও পেরা মেডিক্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ইপিজেড, নৌ ও বিমান বাহিনী ইত্যাদির প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণের জন্য অগণিত স্থানীয়দের ভূমি ও বাড়ি ইত্যাদি হুকুম দখল করা হয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশেও এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং এটি কোনো আঞ্চলিকতা নয়।‎ এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক শূন্য পদ রয়েছে এবং এগুলি শূন্য না রেখে স্থানীয় বা তদসংলগ্ন চট্টগ্রামবাসীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়াগ প্রদানের দাবি জানান বক্তারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে, থানায়, শহরে এবং জেলায় প্রতিটি ইউনিয়ন ভিত্তিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে প্রশাসন পুলিশ এবং স্থানীয় জনসাধারণের একটি কমিটি গঠন করারও প্রস্তাব করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। বক্তারা দশ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময়, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে জনমত গঠনমূলক সভা, মানববন্ধনসহ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ফোরামের উপদেষ্টা মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াস প্রমুখ।

এএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!