বিপন্ন বৃদ্ধার ৩৯ বছরের ক্ষতি তিন মাসে পুষিয়ে দেয়ার নির্দেশ

বন্দরে দুদকের গণশুনানি

চট্টগ্রাম বন্দরের অধিগ্রহণের ৩৯ বছর পরও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ পাননি নুর ছেহের বেগম নামের এক বৃদ্ধা। অধিগ্রহণ করা জায়গার বদলে পুনর্বাসন করার বিধান থাকলে তাও করেনি কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিপূরণের আশায় বয়সের শেষবেলায় এসে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ঘুরছেন তিনি। অবশেষে দুদকের গণশুনানিতে এসেই আশার আলো দেখছেন ওই বৃদ্ধা।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দুদকের গণশুনানিকালে বন্দর চেয়ারম্যানকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমাধান করতে নির্দেশ দেন দুর্নীতি দমন কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম।

নুর ছেহের বেগম (৫৫) দক্ষিণ হালিশহরের নিউমুরিং তক্তারপুল এলাকার ফজল সুকানির বাড়ির আলিম উল্লার স্ত্রী।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০-৮১ সালের চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মপরিধি বাড়াতে বহুমূখী জেটি নির্মাণ করতে আলিম উল্লাহ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দশমিক ৮১ শতাংশ জায়গা অধিগ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। অধিগ্রহণের নোটিশ দেখে সেসময় আলিম উল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে তার স্ত্রী নুর ছেহের বেগম ৭ বছরের এক ছেলে ও ছোট দুই মেয়ে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবরে বারবার ধরনা দিয়ে কোনো ফলাফল না পেয়ে ১৯৯০ সালে চট্টগ্রামের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা (১০৩/৯০) করেন। দীর্ঘদিন পর এ মামলার আলিম উল্লাহর পক্ষে একটি ডিক্রি দেন আদালত। ডিক্রিতে আলিম উল্লাহর ওয়ারিশদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালতে নির্দেশনা পর দেখা যায়, আলিম উল্লার পিতা সুলতান আহমেদের ওয়ারিশরা স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ক্ষতিপূরণের টাকা টাকা তুলে নেয়। তার পুনর্বাসন এখনও বলবৎ রয়েছে বলে জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

জানা যায়, আলিম উল্লা বিভিন্ন সময়ে দফতরে চিঠিপত্র, অভিযোগ প্রদান ও আদালতে মামলার ডিক্রি পাওয়ার পরও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের স্মারকমূলে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল পুনর্বাসন করার ব্যাপারে ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন মাহমুদ একটি মতামত দেন। এতে বলা হয়, ওই রায়ে নুর ছেহের বেগম গংকে তাদের কাছে অধিগ্রহণকৃত ভূমির সমপরিমাণ চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন ভূমিতে পুনর্বাসন করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

এদিকে ২০০৯ সালের দক্ষিণ হালিশহর মৌজায় এলএ মামলা নম্বর ৯৩/৮০-৮১ পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি আলী উল্লার নামীয় কতটুকু জমি হুকুম দখল করা হয়েছে এবং মূল্যসহ স্থাপনার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও কতটুকু পরিশোধ করা হয়েছে জানানোর জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) কাছে অনুরোধ জানান বন্দরের উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান।

নুর ছেহের বেগম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ, তারপরও গণশুনানিতে এসেছি। কী করব, দেশের স্বার্থে বন্দরকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন কিছুই তো পেলাম না। দুদকের মাধ্যমে আমার প্রাপ্ত অধিকার ফিরে পেতে এখানে আসলাম। বন্দরকে তিন মাসের মধ্যে সমাধান করতে বলেছে দুদক। মৃত্যুর আগে ছেলেমেয়েদের প্রাপ্ত অধিকার বুঝিয়ে দিয়ে মরলেও শান্তি পাব।’

মুআ/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!