বন্দরে করোনা হাসপাতাল সচলে বাধা হয়ে দাঁড়াল অক্সিজেন

করোনার ‘রেড জোন’ হিসেবে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকা তালিকাভুক্ত হওয়ার মধ্যেই এ সপ্তাহ থেকে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তির প্রস্তুতি নিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অক্সিজেনের অভাব। বন্দর হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মান রেখে করোনা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। রোববার ২১ জুন রোগী ভর্তির প্রস্তুতিও ছিল কর্তৃপক্ষের। সেজন্য সব ধরনের যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হয়েছে। অক্সিজেনের স্থায়ী লাইনও বসানো হয়েছে। এখন অক্সিজেন পেতে সময় লাগছে আরও কয়েকদিন। কর্তৃপক্ষের আশা, দুই-একদিনের মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার এসে যাবে হাসপাতালে। কেবল তখনই রোগী ভর্তি শুরু হবে।

হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, করোনার প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীকে আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে করোনা শনাক্ত হলে তাকে সরিয়ে অন্য একটি আলাদা ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। শুধু তাই নয়, করোনা শনাক্ত রোগীদের মধ্যে যাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন, সেসব রোগীকে রাখা হবে আলাদা একটি ওয়ার্ডে। সে জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আবার এখান থেকে অতি খারাপ রোগীকে রাখার জন্য করা হয়েছে আলাদা জায়গা। রোগীর ভাল-মন্দের মানদণ্ডের ভিত্তিতে রাখা হবে আলাদা করে। নতুন ভবনের দুই তলায় অবাধে প্রবেশের রাস্তাও বন্ধ করা হয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলে আর প্রবেশ করতে পারবে না করোনা ওয়ার্ডে। আইসোলেশন ওয়ার্ডে বসানো হয়েছে অটোমেটিক বেড। একজন রোগীর জন্য যা যা প্রয়োজন, সব ব্যবস্থা করেই সাজানো হয়েছে বন্দর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডকে।

জানা গেছে, গত ১৮ জুন১৩ জন চিকিৎসক যোগদান করেছেন ওই হাসপাতালে। বর্তমানে প্রস্তুত হচ্ছে ১০টি ভেন্টিলেটর। প্রাথমিকভাবে ১০টি ভেন্টিলেটর ছাড়াও ৫০ থেকে ৬০ বেড তৈরি করা হচ্ছে ওই ওয়ার্ডে। পর্যায়ক্রমে বেড আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী অক্সিজেন। তাই অক্সিজেন্টের স্থায়ী লাইন বসানো হয়েছে। এ হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মান রেখেই করা হচ্ছে। চালুর জন্য ইকুইপমেন্ট, ডাক্তার ও জনবল নিয়োগ হয়েছে।’

জানা গেছে, করোনা ও করোনার লক্ষণ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মৃত্যু ও প্রায় দেড় শতাধিক আক্রান্ত হওয়ার পর করোনার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বন্দর হাসপাতালকে। নতুন ভবনেই তৈরি হচ্ছে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড, আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন।

এর আগে বন্দর রিপাবলিক ক্লাবে ১০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকায় সেটি গুটিয়ে নিয়ে বন্দর হাসপাতালে এর কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

করোনা মহামারীতেও কাজ করে চলেছে বন্দর কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতেও ২৪ ঘণ্টা সচল রয়েছে বন্দর। বন্দরের কয়েকজন কর্মীর মৃত্যু ও আক্রান্তের পর সিবিএ ভবনে করোনার নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়। যা চমেক হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা শেষে ফলাফল জানতে পারেন কর্মীরা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের করোনা আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বন্দর হাসপাতালের নতুন ভবনেই ৫০ থেকে ৬০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড গড়ে তোলার প্রস্তুতি চলছে। এজন্য চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ও তাদের পরিবারের সদস্য ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বন্দর চেয়ারম্যানের পিএসহ মারা গেছেন ১০ জনের বেশি।

বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, বিআইডিআইডি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বন্দর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা চালু হলে আর বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে না বন্দর কর্মীদের।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!