বনের বাগড়ায় আটকে গেল পটিয়া-রাঙ্গুনিয়া-বান্দরবান মহাসড়কের প্রস্তাব

বনবিভাগের বাগড়ায় আটকে গেল চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে বান্দরবান পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন সড়কের নির্মাণকাজ। পটিয়ার হাইদগাঁও থেকে রাঙ্গুনিয়া হয়ে বান্দরবান পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাসড়কটি নির্মিত হলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট— এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মহাসড়কটি পটিয়া-অন্নদাদত্ত-হাইদগাঁও-রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম খুরুশিয়া-কালিন্দিরানী সড়ক-দুধপুকুরিয়া-চন্দনাইশের ধোপাছড়ি-শঙ্খতীরের ডলুপাড়া-বালাঘাটা হয়ে বান্দরবানের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে প্রস্তাবনায়।

চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে বান্দরবান পর্যন্ত নতুন একটি সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবনা মূলত সড়ক বিভাগ—সওজের। সড়কটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সওজ। এ অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে সড়কটির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩৩ লাখ টাকা। তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বাগড়া দিয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ। তাদের দাবি, এ সড়ক নির্মাণ হলে রাঙ্গুনিয়ার অংশটি দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে পড়বে। এতে পরিবেশ, বন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।

তবে সওজের দাবি, রাঙ্গুনিয়ার যে অংশে সড়ক নির্মাণ করা হবে সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে অভয়ারণ্য এলাকা। বনবিভাগের যেটুকু অংশ সড়কের কাজে ব্যবহার করা হবে সেখানে তেমন কোনো গাছপালা নেই। তাছাড়া পাহাড় কিংবা গাছপালা না কেটেই সড়কটি নির্মাণ করা যাবে। বর্তমানে সেখানে কাঁচা রাস্তা রয়েছে।

দোহাজারী সড়ক বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উন্নয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পটিয়া-অন্নদাদত্ত-হাইদগাঁও-রাঙ্গুনিয়া মহাসড়ক নির্মিত হলে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মধ্যে সরাসরি সহজ ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্প হওয়ায় প্রকল্পের আওতায় যেসব সড়ক ও সেতু নির্মাণ হবে তাতে কোনো ধরনের টোল দিতে হবে না।

এ ব্যাপারে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রায় ১৬ কিলোমিটারের পটিয়া-রাঙ্গুনিয়া মহাসড়কটি পটিয়া-অন্নদাদত্ত-হাইদগাঁও-রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম খুরুশিয়া-কালিন্দিরানী সড়ক-দুধপুকুরিয়া-চন্দনাইশের ধোপাছড়ি-শঙ্খতীরের ডলুপাড়া-বালাঘাটা হয়ে বান্দরবানের সাথে মিলিত হবে।

সুমন সিংহ আরও বলেন, সড়কটি নির্মিত হলে বান্দরবান-দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, রাজস্থলী, কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করা সহজ হবে। এসব এলাকার মানুষকে বান্দরবান কিংবা কক্সবাজার যেতে হলে রাউজান, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম শহর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামগামী বাস কিংবা পণ্যবাহী যানবাহন বর্তমানে সাতকানিয়ার কেরানীহাট-চন্দনাইশ হয়ে যাতায়াত করে। সড়কটি বাস্তবায়ন হলে বান্দরবানের পর্যটন খাত ছাড়াও ওইসব এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতে আমূল পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র দক্ষিণ বনবিভাগের মন্ত্রণালয়ে আপত্তির কারণে প্রকল্পটি আটকে আছে। যদি তাদের কারণে এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

তবে এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগে যোগাযোগ করেও উর্ধতন কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!