বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার সাক্ষী খুনে যাবজ্জীবন পাওয়া আসামি জামিন চেয়েছেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা (জেলহত্যা) মামলার অন্যতম সাক্ষী কমোডর গোলাম রাব্বানী হত্যামামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কেইপিজেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু নাসের চৌধুরী আপিল বিভাগে জামিনের আবেদন করেছেন। আগামী ২২ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে।

রোববার (১৫ নভেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে কমোডর গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। চট্টগ্রামের আদালত তাদের ৫ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছিল। হাইকোর্ট তাদের সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মো. সেলিমের সাজা বহাল রাখা হয়। এছাড়া নিম্ন আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া মো. সাইফুল ইসলামের ক্ষেত্রে নতুন করে বিচার করতে বলা হয়। এই চার আসামিকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এ মামলায় নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামি সোহেল ওরফে আব্দুল মালেককে খালাস দেওয়া হয়।

চট্টগ্রামের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী ২০০৪ সালে ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ূন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় সেদিনই মামলা (হত্যা চেষ্টা) করেন কেইপিজেড-এর সাইট ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ইমতাজুল ইসলাম। কিন্তু ওই বছরের ২৪ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গোলাম রাব্বানী। এরপর মামলাটি হত্যামামলায় রূপান্তরিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নৌ-বাহিনীর সাবেক কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং নৌ-পরিবহন বিভাগের মহা-পরিচালকও ছিলেন।

পরবর্তীতে তদন্ত শেষে একই বছরের ২৮ আগস্ট আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ূন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল ওরফে আব্দুল মালেক ও মো. হাশেমকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় বিচার শেষে ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়। রায়ে মো. সেলিম, মো. হাশেম ও সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ূন কবির চৌধুরীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর দুই আসামি সাইফুল ইসলাম ও মনছুর আলমকে খালাস দেওয়া হয়।

এই রায়ের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামি মো. হাশেম। শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্ট তাকে খালাস দিয়ে রায় দেন। অপরদিকে সাজাপ্রাপ্ত অপর চার আসামি আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ূন কবির চৌধুরী, মো. সেলিম ও সোহেল ২০০৫ সালে হাইকোর্টে পৃথকভাবে আপিল করেন। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্তদের সাজা বাড়াতে এবং খালাস পাওয়া সাইফুলের খালাসের রায় পুনর্বিবেচনা করতে বাদীপক্ষ পৃথক আবেদন করে।

এসব আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২০১৪ সালে রায় দেন হাইকোর্ট। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর। এরপর ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর আবু নাসের চৌধুরী ও মো. সেলিম বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে তারা কারাবন্দী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!