বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের অফিস দখল করলো আওয়ামী লীগ নেতা!

চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ২৫ বছর আগে লোকমান গাজী নামের এক ব্যক্তির জায়গা উদ্ধার করে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এর প্রতিদান স্বরূপ উদ্ধারকারীদের ৩ শতক জায়গা দেয় জমির মালিক। ওই ৩ শতক জমি তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নামে দানপত্র করে দেয়। ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের।

এরপর থেকে ওই জমিতে গড়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের অফিস। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্র‍য়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এ অফিসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ওই জমিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসলেও সম্প্রতি পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া ওয়ার্ডের মনজুর আলম নামে এক ব্যক্তি ওই জমির মালিকানা দাবি করে। বুধবার (১২ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে মনজুর আলম ও তার অনুসারীরা ওই জায়গা দখল করতে আসে। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাবের আহম্মেদ সওদাগর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার নামে দানকৃত ভূমিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি এলাকায় বঙ্গবন্ধু ক্লাব নামে পরিচিত। জায়গার মালিক লিখিত কাগজপত্রে শেখ হাসিনার নামে দানপত্র করেন। তবে রেজিস্ট্রি বাকী ছিল মাত্র।’

জানা যায়, সরাইপাড়া এলাকার কলকা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের পাশের এলাকার বাসিন্দা মনজুর আলম। নিজেকে তিনি আওয়ামীলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন। ওই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের পরিচালনা কমিটির দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। বুধবার মনজু ক্লাবের জায়গা দখল করে সাইন বোর্ড, মালপত্র সরিয়ে নেন।

এরপর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ১০ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মো. ইসমাইল শতাধিক লোকজন নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের অফিসটি দখলে বাধা দেন। এ সময় মনজুর লোকজন আশপাশের গলিতে অবস্থান নেয়। এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতংক। পরে পাহাড়তলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

দখলের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদসহ এলাকাবাসীর মানববন্ধন
দখলের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদসহ এলাকাবাসীর মানববন্ধন

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের সাবেক সাধান সম্পাদক এমএ হাসেম রাজু বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে ৩ শতক জমক দান করেন জায়গার মালিক লোকমান গাজী। তিনি এখনো জীবিত ও বয়োবৃদ্ধ। অসুস্থ অবস্থায় বাকহীন হয়ে তিনি শয্যাশায়ী। খালেদা বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের জমায়েত ছাড়াও কর্মীদের নানা ত্যাগের সাক্ষী বঙ্গবন্ধু ক্লাবটি। ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটিতে এমন কোন নেতা নেই যার পদধূলি পড়েনি। সবাই এক নামে চেনে ক্লাবটিকে। অবাক লাগছে অনেক নেতা আছে এখন। কিন্তু তাদের অনেকে ঐতিহাসিক ক্লাবটি দখলের খবর জেনেও এখন চুপ করে আছে।’

এতদিন পর জায়গা দাবির কারণ জানতে চাইলে মনজুর আলম বলেন, ‘২০০৪ সালে ও ২০১৩ সালে দুই বার রেজিস্ট্রি নিই আমক। লোকমানের ভাই থেকে আমি এই জমি কিনে নিই। আমার কেনা জায়গায় অযথা ১০নং ওয়ার্ড সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল এসে নাক গলাচ্ছেন।’

লোকমান গাজীর ভাইয়ের সন্তান কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আব্বু এ জায়গা কারো কাছে বিক্রি করেনি। এ জায়গা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ক্লাবের, যা আমাদের বংশধররা সবাই অবগত।’

মনজুর অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আমি দলের এক সাধারণ কর্মী। আমি জীবিত থাকতে নেত্রীর নামে জায়গা এবং মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাতে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির জায়গা কোন ভূমিদস্যু দখল করবে- আমরা তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে পারিনা। থানায় বৈঠক করে কি সিদ্ধান্ত দেয় সেটা দেখি।’

এ বিষয়ে জানতে পাহাড়তলী থানার ওসি মো. মাইনুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, দুইপক্ষের বৈঠকে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!