বঙ্গবন্ধুর আস্থা অর্জনে সক্ষম হন অধ্যাপক খালেদ

প্রেসক্লাবে অধ্যাপক খালেদ স্মারক বক্তৃতায় উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ

অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ছিলেন বিশাল বড় মাপের মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকে জীবদ্দশায় কাজ করে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন বিধায় তাঁকে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য মনোনীত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের রাউজান থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও পরাজিত প্রার্থীর অসম্মান হবে ভেবে বিজয় মিছিল করা থেকে তার নেতা-কর্মীদের নিবৃত রেখেছেন। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ সহ বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তি একজন পরিপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারলে সমাজ আরও উপকৃত হবে। এই অসাধারণ ব্যক্তির স্মারক বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। ভবিষ্যতে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জীবদ্দশায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর গবেষণাকার্য পরিচালনার জন্যও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মারক বক্তৃতাকালে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

স্মারক বক্তব্যের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস। দ্বিতীয় পর্বে সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। পরিবারের পক্ষ থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের বড় ছেলে মোহাম্মদ জহির। স্মারক বক্তা ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের জীবনী, ভাষা-সাহিত্য এবং গবেষণার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি শিশুসাহিত্যিক সাংবাদিক রাশেদ রউফ।

বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস।
বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস।

‘বঙ্গবন্ধুর ভাষা ও সাহিত্যচিন্তা’ শীর্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মারক বক্তৃতায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থেই অভিন্ন ও একান্ত। দেশ ও জনগণের স্বার্থে তিনি নিজের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছেন। জাতীয় পুঁজির আত্মবিকাশের আকাক্সক্ষা ও বাঙালির সম্মিলিত মুক্তির বাসনাকে এক বিন্দুতে মেলাতে তিনি কাজ করেছেন যা বিশ্ব ইতিহাসে কোনো জাতীয়তাবাদী নেতার কর্মসাধনায় বিরল। বঙ্গবন্ধু সবসময় শোষিত মানুষের কাতারে থেকে সংগ্রাম করেছেন যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।

স্মারক বক্তৃতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনীতির মানুষ হয়েও শুধুমাত্র রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্য, সংগীত, খেলাধুলাসহ সববিষয় নিয়ে তিনি চিন্তা করেছেন। বাংলা ভাষা সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনার নির্যাস পাওয়া যায় তাঁর নানা কর্মকাণ্ডে। বাংলা ভাষার উন্নতি ও বিকাশের জন্য বঙ্গবন্ধু সবসময় সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের প্রেরণা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তব্যে বাংলা ভাষাকে গণমুখী ভাষা হিসেবে গড়েে তুলতে বুদ্ধিজীবীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের লেখনীর দিয়ে, দুঃখী মানুষের সংগ্রাম নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করারও জোর তাগিদ দেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ আরও বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর এই সম্পৃক্তি বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসারই প্রত্যক্ষ প্রকাশ। জেলে থেকেই বঙ্গবন্ধু গোপনে ভাষা আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা থেকেই তিনি প্রথম ১৯৫২ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের শান্তি সম্মেলন এবং ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রিয় ভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। ‘এক রাষ্ট্র এক ভাষা’ স্লোগান উত্থাপন করে বাঙালি সংস্কৃতি ধ্বংসের পাঁয়তারা বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু বর্ণমালা পরিবর্তনের সরকারি প্রস্তাবনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। স্বাধীনতার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলায় সংবিধান প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের প্রতিও ছিল বঙ্গবন্ধুর গভীর অনুরাগ। তিনি তাঁর বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের কবিতা অবলীলায় উচ্চারণ করতেন।

এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি শহীদ উল আলম, ইউএসটিসির সাবেক উপাচার্য ডা. প্রভাত বড়ুয়া, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রূপম চক্রবর্তী, কার্যকরী সদস্য স ম ইব্রাহীমসহ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!