বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব জাতির জন্য আল্লাহর নেয়ামত— আইআইইউসিতে এমপি নদভী

বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব এই জাতির জন্য আল্লাহর নেয়ামত বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়টিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কুমিরা ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মত বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আয়োজন করা হয়। এতে আলোচনা সভার পাশাপাশি আয়োজন করা হউ শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব এই জাতির জন্য আল্লাহ’র নেয়ামত। কারণ এই নেতার আবির্ভাব না হলে এ মাটির সন্তানেরা শোষণের হাত থেকে রেহাই পেতো না, আত্মপরিচয় পেতো না। বঙ্গবন্ধুর কৌশলী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই বিশ্ব-মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বকীয় অবস্থান নিশ্চিত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেসকল গুণাবলী থাকলে একজনকে ইমামত দান করেন সেসব গুণাবলী বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিল। আল্লামা ইকবালের কবিতায় এসেছে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও সাহসীকতা যার কাছে থাকবে আল্লাহ তাকে নেতৃত্বের আসনে বসাবেন। বঙ্গবন্ধু ন্যায়পরায়ণ ছিলেন, তার মধ্যে সততা ছিল, সত্যবাদীতা ছিল, তার মধ্যে ছিল সাহসও। এই তিনটি গুণে গুণান্বিত বঙ্গবন্ধু বিশ্বের প্রভাবশালী, মানবিক ও সফল নেতাদের তালিকার উপরের দিকে স্থান গড়ে নিয়েছে।’

প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভী আরও তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সূচনা লগ্নে দলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী। তিনি ভারতের বিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই ভাষানীর সাহচার্য পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ভাসানীর মত নেতার চেয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিচক্ষণ। তিনি জনগণের পালস বুঝতে বেশি সক্ষম ছিলেন বলেই তার হাত ধরে স্বাধীনতা এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রাজনীতির সূচনা লগ্নেই মুসলমানদের অধিকার আদায়ে লড়াই করেছিলেন। সাম্প্রতিক অতীতে যারা আওয়ামী লীগকে ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফায়দা নিতে চেয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য আবারও বলতে চাই, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্রের মাত্র সাড়ে তিন বছর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন। টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দান বঙ্গবন্ধুর অবদানেই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুই এ দেশকে ওআইসি’র সদস্য করেছিলো। যুগের পর যুগ ধরে এই মাটিতে মুসলমানদের জন্য ভিত্তি শক্ত করতেই বঙ্গবন্ধু দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে এসব করে দিয়েছিলেন।’

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘এ জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখে বঙ্গবন্ধু যে বীজ বপন করে গিয়েছিলেন, সে বীজ থেকে সমৃদ্ধ ফসল ফলিয়ে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর মতোই দুরদর্শিতার প্রমাণ দিয়ে শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতাদের সামনের সারিতে আসন গ্রহণ করেছেন। এ জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে জীবনবাজি রেখে প্রাণপণে লড়ে তিনি লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। যা পাশের কোনো দেশ এতো অল্প সময়ে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এখন সময়ের ব্যাপার। প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্তর থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে কাজ করলে এই দেশ সমৃদ্ধির শিখরে অচিরেই পৌঁছে যাবে। এ মাটিতে বঙ্গবন্ধুর আবির্ভাব আল্লাহ’র অশেষ নেয়ামত। না হয় এ জাতির মুক্তি মিলতো না।’

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মতো ধার্মিক সেসময় খুব কম বাঙালিই ছিল। তিনি এ দেশের মুসলমানদের সমৃদ্ধির জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বের সকল মানুষকে ভালবাসি। আর বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসি। কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ নয়- এমন চেতনা থেকে তিনি এই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন থেকে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাঙালিদের চুতিয়া, বাঙাল, গাদ্দার, মালাউনের বাচ্চা বলতো পাকিস্তানিরা। অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর মানুষ হিসেবে তারা আমাদের সঙ্গে আচরণ করতো। এখনো পাকিস্তানীদের কেউ কেউ বাঙালিদের প্রতি অবজ্ঞা দেখায়। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের স্বকীয় একটি জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাপ্পান্ন ভাগ মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হতে দেখে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধিকার আন্দোলনের৷ সঠিক সময়ে বিপ্লবের বাঁশি বাজিয়ে বাঙালির মাঝে বিপ্লবের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন তিনি। তিনিই কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামে আপামর জনতাকে অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীকারের সংগ্রাম সফল করতে সক্ষম হয়েছেন। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র আমরা তাঁর নেতৃত্বে পেয়েছি। এ কারণে তাঁর কাছে এই জাতি ঋণী।’

অনুষ্ঠানের আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মছরুরুল মওলা বলেন, ‘রাজনীতির মহাকবি বঙ্গবন্ধুই এ জাতির ভাগ্য-আকাশের কালো মেঘ কাটিয়ে সুবিমল শরতের সাদা মেঘ এনে দিয়েছিলেন। যুগের পর যুগ ধরে লাঞ্চিত, নিপীড়িত বাঙালি জাতি আজ বিশ্বের কাছে যে মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তার একমাত্র কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধুর। তাঁর আদর্শই হোক আমাদের সামনের পথচলার পাথেয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে আজ স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করছে তার একক অবদান বঙ্গবন্ধুর।’

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আরও বহু বিপ্লবী, নেতা এই জাতিকে লাঞ্চনা, নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি দিতে লড়াই করেছেন, আত্মাহুতি দিয়েছেন। কিন্তু সফলতা আসেনি। বাঙালি জাতির মুক্তি মিলেছে কেবল টুঙ্গীপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমানে নেতৃত্বে। তাঁর দেওয়া সময়োপযোগী ও দক্ষ নেতৃত্বই একটি জাতিকে পাকিস্তানি নিষ্পেষণ, আগ্রাসন থেকে মুক্তি দিয়েছে। আজকে বাংলাদেশের মানচিত্র চোখে পড়লেই আমরা তাতে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে এ জাতিকে স্বকীয়তা প্রদান করেছেন বলেই আজকে স্বাধীন দেশের পাসপোর্ট হাতে বিদেশ ভ্রমণ করছি আমরা। বাঙালি জাতির সন্তান হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে তাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে। তাঁর আদর্শকে ধারণ করে দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের সমৃদ্ধি তরান্বিত করতে ভূমিকা রাখতে হবে।

অনুষ্ঠান শুরু আগে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জাতীয় পতাকা ও আইআইইউসি’র পতাকা উত্তলন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে নিবেদন করা হয় শ্রদ্ধা। এরপর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার করিডোরে অংশ নেওয়া শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী, প্রফেসর ড. সালেহ জহুর, ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমদ চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. ফসিউল আলমও।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আকতার সাঈদ, রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শফিউর রহমান, দাওয়াহ এন্ড ইসলানিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান এএফএম নুরুজ্জামান।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইনস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেসের পরিচালক (আইএমএল) ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পরিচালক মুহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন এবং বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহিল মামুন।

অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী মেজবানে অংশ নেন আইআইইউসি’র শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!