বকশিশের নামে ‘চাঁদাবাজি’, চমেকে পদে পদে হয়রানি রোগী—স্বজনদের

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের গেটে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গাফিলতিসহ নানা অভিযোগ ওঠেছে।

হাসপাতালের নিচে মূল ফটকে ও সিঁড়িতে আনসারদের দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তারা দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে বেশিরভাগ সময় রোগী, রোগীর স্বজন ও গেটের বাইরে সিএনাজি অটোরিক্সা থেকে টাকা তুলতেই ব্যস্ত থাকে। আর রাত ১০টার পর দায়িত্ব পালন বাদ দিয়ে ক্যাম্পে গিয়ে সময় কাটান।

সরেজমিন দেখা গেছে, দুপুর ৩টা থেকে ৪টা ও রাত ১০টার পর চমেক হাসপাতালের নিচের মুল ফটক, সিঁড়িতে এবং গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর জায়গায় আনসার বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে থাকেন না। এর কারণ ব্যাখা করতে গিয়ে আনসার সদস্যরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের এ সময় দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা নেই। আর হাসপাতালের উপপরিচালক বলছেন, আনসার সদস্য স্বল্পতায় এমনটি করা হচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, আনসার সদস্যদের চাঁদাবাজিতে তাদের দায়িত্ব অনেকটা সীমিত করা হয়েছে।

জানা যায়, চমেক হাসপাতালে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় ৮০ জন আনসার দায়িত্ব পালন করার কথা। পালাবদল করে তাদের এ দায়িত্ব পালনের নিয়ম। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা, দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা ও রাত ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত দায়িত্ব ভাগ করা আছে হাসপাতাল থেকে। কিন্তু তারা সঠিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা রকমের অনিয়মের তথ্যও জানা গেছে। রোগী ও তার স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার, বকশিসের নামে চাঁদাবাজি, হাসপাতালের আয়া, ওয়ার্ডবয়, নার্স, ডাক্তারের সাথে যোগসাজশ করে ওষুধ চুরি, বাচ্চা চুরিসহ অনেক অপরাধে জড়িত হয়ে পড়েছেন বলেও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

গত শুক্রবার (১২ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালের মূল ফটক ও সিঁড়িত দেখা যায়নি কোন আনসার বাহিনীর সদস্যকে। রোগীর স্বজনরা অনায়াসেই চলে যেতে পারছেন যেকোনো ওয়ার্ডে। নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় নেই কোন জবাবদিহীতা। হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগের পাশে আনসার ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ মিলে সদস্যদের। সবাই ঘুরছেন সিভিল পোশাকে।

এখানে কথা হয় সহকারী কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। তিনি জানান, ‘রাতে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের দেননি। তাই আমরা এ সময় গেটে থাকি না।’

হাসপাতালে কর্মরত আনসার বাহিনীর কমান্ডার এম ইলিয়াছ আলী জানান, ‘আমি সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতালে যোগদান করেছি। তাই এখনো কিছু বুঝে ওঠতে পারিনি।’

এদিকে আনসার সদস্যের নামে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। যে আনসারই দায়িত্বরত থাকুক না কেন সবার চিন্তা ভাবনা থাকে কিভাবে টাকা আদায় করা যাবে। অনেক সময় আনসার বাহিনীর সদস্যরা রোগীর স্বজনদের পাসকার্ড নিতে নিরুৎসাহিত করে বলেও অভিযোগ এসেছে রোগীর স্বজনের কাছ থেকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আফতাবুল ইসলাম জানান, ‘আসলে হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও ৫০ জন আনসার সদস্য দরকার। আমরা বিষয়টা নিযে ভেবেছি। আর আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায় রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা দাবি করার অভিযোগ আসে। তাই রাতে ডিউটিতে ওদের রাখা হয়নি।’

কেএস/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!