ফয়স লেকে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ মন্ত্রীর

মন্ত্রীর তোপের মুখে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা

এক কর্মকর্তা ইটভাটা বন্ধ হলে ইটের সংকট দেখা দেবে- এমন কথা জানালে মন্ত্রী বলেন, ইটভাটা বন্ধ হলে তা দেখার বিষয় আপনার নয়, সরকারের। আমরা প্রয়োজনে ব্লক ব্যবহার করব। পরিবেশ ঠিক না থাকলে মানুষ থাকবে না, ইট দিয়ে কী করবেন?

মন্ত্রীর তোপের মুখে পড়লেন চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০০ গজ দূরে ফয়স লেকে পাহাড় কাটা হচ্ছে- এমন খবর জানার পর মন্ত্রী দ্রুত তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, পাহাড় কাটা ও অবৈধ ইটভাটার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নবনির্মিত গবেষণাগার পরিদর্শনে এসে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজে। শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১১টায় নবনির্মিত গবেষণাগার পরিদর্শনকালে মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী।

মন্ত্রী পরিবেশ অধিদপ্তরের নবনির্মিত গবেষণাগার ঘুরে দেখেন। পরে সম্মেলন কক্ষে কমকর্তা ও সাংবাদিকদের সাথে বৈঠক করেন।

environment

বৈঠকে মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, পাহাড় কাটা ও অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। লোকবল সংকট থাকলে তা পূরণ করা হবে। বসে থাকলে হবে না। যতই প্রভাবশালী হোক তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইটভাটার মালিকেরা আদালতে রিট করলেন। আর আপনারা আর ওই দিকে গেলেন না, তা চলবে না। রিটের জবাব দেন। বিষয়টি দেখেন।

এক কর্মকর্তা ইটভাটা বন্ধ হলে ইটের সংকট দেখা দেবে- এমন কথা জানালে মন্ত্রী বলেন, ইটভাটা বন্ধ হলে তা দেখার বিষয় আপনার নয়, সরকারের। আমরা প্রয়োজনে ব্লক ব্যবহার করব। পরিবেশ ঠিক না থাকলে মানুষ থাকবে না, ইট দিয়ে কী করবেন?

চট্টগ্রামে পরিবেশের জন্য হুমকি পলিথিনের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, এখানে যে উন্নতমানের গবেষণাগার রয়েছে তা দেশের কোথাও নেই। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। নদী ও খাল ভরাট বন্ধ করতে হবে। চট্টগ্রামকে বাচাতে হবে। দূষণমুক্ত চট্টগ্রামের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

একজন সাংবাদিক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, উন্নয়নের নামে বন উজাড় করা হচ্ছে। উন্নয়ন দরকার তবে পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০০ গজ দূরে ফয়স লেকে পাহাড় কাটা হচ্ছে। গতকাল দেখেছি। এগুলো বন্ধ হচ্ছে না কেন?’ আরেক সাংবাদিক বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরে তথ্যের জন্য আসলে কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে চান না। এখানে-ওখানে ঘোরান।’

মন্ত্রী এ সময় ফয়স লেকে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তিনি বলেন, আমরা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। আমি তুরস্কে দেখলাম পাহাড় অক্ষত রেখে ভবন করা হয়েছে। আমরাও এরকম করতে পারি।

সচিব আবদুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী এ সময় চট্টগ্রামের মোট শিল্পকারখানার সংখ্যা, পাহাড় ও টিলা কাটার তথ্য, পলিথিন, ছাড়পত্র, জরিমানা আদায়, নদী ও নালা ভরাটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে জানতে চান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সঠিক কোন পরিসংখ্যান দিতে পারেননি। এ সময় সচিব আবদুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সচিব পাহাড় কাটা, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বললে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংকট ও আদালতে রিটের কথা জানান। ছাড়পত্রবিহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা কাজ করছি।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন, মো. আজাদুর রহমান মল্লিক, নুরুল্লা নুরী প্রমুখ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!