ফ্ল্যাটে স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ/পরিবারের দাবি হত্যা হলেও পুলিশ বলছে আত্মহত্যা

নগরীর বন্দর থানায় একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ডালপালা মেলছে রহস্য। লাশের সুরতহাল, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিবারের বর্ণনায় এটাকে হত্যা হিসেবে দাবি করে বাড়িওয়ালাকে দায়ী করা হলেও ঘটনার একদিন পরও পুলিশ বলছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে!

পরিবারের লোকজন এ ঘটনায় মামলা দায়ের করতে চাইলেও থানা পুলিশ বাড়িওয়ালার পক্ষ নিয়ে মামলা নিতে অনীহা দেখাচ্ছে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হলেও সেখানে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। পরিবারের দাবির মুখে বাড়িওয়ালা একে খানকে আটক করে নিজ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবা করছে পুলিশ।

এর আগে বুধবার (২ অক্টোবর) রাতে নগরীর বন্দর থানার দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে রেবেকা সুলতানা পলি (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ। কুড়ি পুকুর পাড় এলাকার খান টাওয়ারের নিচতলায় স্বামী পরিত্যক্তা মা ও কলেজ পড়ুয়া ভাইকে নিয়ে থাকতো স্কুল ছাত্রী পলি। পলি নগরীর হলিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের (সিটি কর্পোরেশনের স্কুলে) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তারা খাগড়াছড়ির এলাকার বাসিন্দা। তার মা বন্দর এলাকায় সিইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত। নিহতের বাবা অন্য একটি বিয়ে করে মালয়েশিয়া পাড়ি দেন। বর্তমানে নিহত পলির মা উপার্জন করে সংসার চালান। পলির বড় ভাই রাসেল অনার্স শেষ করে বিসিএস কোচিং করছেন।

সিএমপির বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘পরিবারের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুুধবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই এবং তার মরদেহ উদ্ধার করি। আমরা প্রাথমিকভাবে দেখে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে মনে হয়েছে।’

তবে পরিবারের দাবি স্কুল ছাত্রী পলিকে খুন করা হয়েছে। পরিবার বাসার মালিক এ কে খানকে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। যার কারণ হিসেবে পলির ভাই রাসেল বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) বিকালে আমি কোচিং এ যাওয়ার আগে পলি স্কুল থেকে আসছে। আমার মা তখন বাইরে ছিল প্রতিদিন মা রাত আটটায় কাজ করে ফিরে। তখন পলি ঘরে একাই থাকে। আমিও কোচিং করতে বিকালে বাইরে যাই। গতকাল সাড়ে সাতটার সময় কোচিং থেকে এসে সামনের দরজা দিয়ে ডাকছি দেখি খোলছে না। আমি ভাবলাম পেছনের রুমে ঘুমিয়ে পড়ছে। তাই পিছনের দরজা দিয়ে ডাকলাম তাও কোন সাড়া না পেয়ে। উপরের তলার এক চাচিসহ পেছনের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখি পলি পাকার সাথে ঝুলে আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর দেখি সামনের দরজা ভিতর থেকে খুলে কে বেরিয়ে গেছে। আর পলির হাতে গালে কামড়ের দাগ ও দেখতে পাই। বাড়ির মালিক এ কে খানকে আমার বোন সহ্য করতে পারতনা। বারবার আমার বোনকে বিভিন্ন রকম কথা বলত। আমরা সন্দেহ করতাম না কারণ আমার বোন এখনো ছোট ১৩ বছর আর লোকটার ছেলে মেয়ে পরিবার আছে। আর হজ্জও করছেন। তার মেয়েও নবম শ্রেণিতে পড়ে। তবে সে বার বার আমাদের বাসায় আসত। আমরা নিচের তলায় থাকি আর লোকটা বাসার নিচে একটি মুদির দোকানও দিয়েছে। যার ফলে বারবার বিভিন্ন বাহানা দিয়ে আসতো। বিল্ডিংয়ের কোথাও সমস্যা হলে বাসার মালিক হিসেবে লোকটা সবার আগেই যায় গতকাল আমার বোনের ঘটনায় লোকটা আসলো না। এমন কি পুলিশ আসার পরেও ডেকে আনতে হয়েছে।’

নিহত পলির মা বলেন, ‘আমার মেয়ের কারো সাথে সম্পর্ক ছিল না। ছোট মেয়ে স্কুলে যায়। কোন সমস্যা ছিলনা। তবে গত কয়েকমাস ধরে বাসার মালিকের কথা বলছিল যে, লোকটা নাকি তার সাথে কেমন করে সেটা ভাল লাগেনা। আমি বুঝতে পারিনি। আর ভাবিনি , ৪২ বছরের একটা লোক আমার মেয়ের দিকে খারাপ নজরে তাকোবে। আমাকেও লোকটা কয়েকবার জিজ্ঞেস করছিল মেয়ের বিয়ে দিব কী না। আমি সবসময় বলতাম মেয়ে যখন হয়ছে সময় হলে বিয়ে দিব এখনতো অনেক ছোট।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি কাজ করি, রাত আটটায় বাসায় ফিরি। আমার বড় ছেলে পড়ালেখা করে। মেয়ে আমার বিকাল থেকে বাসায় থাকে বাইরে যায় না। আমাদের সাথে কারো সমস্যা নেই। তাও কেন এমন হল বুঝতে পারছিনা। আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ আমার মেয়ের ঝুলন্ত অবস্থায় ছবি আর ভিডিও করছে দেখলে বুঝতে পারবেন এটা অন্য কেউ ঝুলিয়ে রেখেছে। আমরা গরিব, জানি টাকা দিয়ে অপরাধী বেঁচে যাবে। তাও আপনাদের মাধ্যমে আমার মেয়ের হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে হলিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পলি হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রাধান শিক্ষকা রোমা বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘পলি খুব শান্ত মেয়ে ছিল। কারো সাথে কোনও ঝামেলা করত না। মেয়েটার সাথে এমন একটা বিষয় ঘটেছে তার জন্য নিন্দা জানাচ্ছি।’

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘নিহতের ভাই থানায় একটি মামলা করেছে। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক এ কে খানকে থানায় নিয়ে আসছি। বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

এইচটি/এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!