ফোন করলে বাসায় যাবে অক্সিজেন, সঙ্গে ফ্রি ওষুধ

ওয়াহিদের অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টার

চট্টগ্রামে ব্যাপক হারে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। তবে বেশিরভাগ মৃত্যু হচ্ছে শ্বাসকষ্টে। করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ পর্যায়টি হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। যাদের শ্বাসকষ্ট হয় তাদের দিতে হয় অক্সিজেন। এ অক্সিজেনের অভাবে চট্টগ্রামে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ধনী-গরিব— এই তালিকায় বাদ যাচ্ছেন না কেউই।

সরকারি হাসপাতালেই যেখানে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হচ্ছে, সেখানে অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। এমন সুযোগে অক্সিজেনের সিলিন্ডার বিক্রেতারাও তিন-চারগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমন সময়েই শ্বাসকষ্টের রোগীদের ফ্রি ডোর-টু-ডোর অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন উত্তর পতেঙ্গার চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মো. ওয়াহিদ হাসান। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সদস্যও তিনি।

শনিবার (১৪ জুন) থেকে তিনি পতেঙ্গার শ্বাসকষ্টের রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিতে নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছেন একটি অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টার। অক্সিজেন ছাড়াও তিনি এ সেন্টারে রেখেছেন জরুরি সব ওষুধপত্র। পতেঙ্গার রোগীদের অক্সিজেন ও ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দিতে তিনি ওই সেন্টারে রেখেছেন ৫ স্বেচ্ছাসেবক। তাদের গাইড করার জন্য আছেন একজন চিকিৎসকও। ফোন করলেই তারা পৌঁছে দেবেন অক্সিজেনসহ জরুরি ওষুধপত্র। চিকিৎসা সহায়তার জন্য রয়েছেন ডা. জয়নাল আবেদিন (ফোন নম্বর ০১৯৮-০৩০১৭৩)। অন্যদিকে স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন করলেই তারা বাড়ি পৌঁছে দেবেন অক্সিজেনসহ জরুরি ওষুধপত্র। এরা হলেন সওকত রানা (০১৭৫১-১১১১০৩), মারুফ উদ্দিন (০১৯১১-৯৫৩৯২৬, শিমুল (০১৮৩৫-৮০৬৮৫৯, তৌসিফ (০১৮৫৫-৫৩৫৮৯৬ ও সাব্বির (০১৫৩৪৩৪৩৬৩৫)।

এমন উদ্যোগ অবশ্য ওয়াহিদ হাসান আগেও নিয়েছেন। লকডাউনের পর থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওয়াহিদ পতেঙ্গার মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। চার মাস আগে ফয়সাল করিম নামের এক ছেলের চিকিৎসার জন্য ২১ লাখ টাকা সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই গল্প তুলে ধরে ওয়াহিদ হাসান বললেন, ‘একদিন ফেসবুকে দেখি পতেঙ্গার এক ছেলের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। আমি দ্রুত তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেসবুকে ‘ফয়সাল করিম চিকিৎসা পরিষদ’ নামের একটি পেইজ খুলে তার জন্য সহায়তা সংগ্রহ করতে থাকি। ২৮ দিন পর দেখি ২১ লাখ টাকা জোগাড় হয়ে গেছে। পরে আমি ওই পরিবারকে টাকাগুলো তুলে দিই।

শুধু এসব নয়, এর আগেও ওয়াহিদ হাসান করেছেন আরও বেশকিছু মানবিক কাজ। তবে এসব কাজে আসার পেছনে রয়েছে এক কাহিনীও। তিনি বলেন, ‘১৫ বছর আগের কথা। যখন আমি স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়তাম তখন আমার একভাই চকের ব্যবসা করতেন। ভাইয়ের এক পার্টনারও ছিল। আমার ভাই তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা পেতেন। তিনি কিছুতেই টাকাগুলো দিচ্ছেন না। একদিন আমি টাকাগুলো খুঁজতে সরাসরি তার বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে একটু গরম সুরে তাকে টাকাগুলো দিয়ে দেওয়ার জন্য বলি। আমার কথা শুনে তো তার মা অজ্ঞান। এটি দেখার পর থেকে অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম হয় আমার মাঝে। এরপর থেকে আমি মানুষকে সবসময় সহায়তা করার চেষ্টা করি। পরে আমি ওই লোকটির কাছ থেকে টাকা নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো তার বোনের বিয়েতে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করি।’
ফোন করলে বাসায় যাবে অক্সিজেন, সঙ্গে ফ্রি ওষুধ 1

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম অক্সিজেনের অভাবে আমার অনেক আপন লোকও মারা যাচ্ছে। তাদের এমন মৃত্যু দেখে আমি আর দেরি করিনি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমি অক্সিজেন সাপোর্ট সেন্টারটি খুলেছি। বর্তমানে এখানে সাতটি বড় সিলিন্ডার রয়েছে। পতেঙ্গার কোনো লোক ফোন করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে আসব। যেহেতু পতেঙ্গায় কোনো হাসপাতাল নেই। এখান থেকে সরকারি হাসপাতালও ১০-১২ কিলোমিটার দূরে। সেজন্য আমি আপাতত পতেঙ্গার রোগীদের বিনামূল্যে এ সেবা দেবো। তবে পর্যায়ক্রমে সিলিন্ডার আরও বাড়বে অন্যান্য এলাকার লোকদেরও দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া এ কাজে আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন তাহের ব্রাদার্স লিমিটেডের পরিচালক মুনতাসীর মানুন।’

ওয়াহিদ হাসান পতেঙ্গা এলাকায় একটি সরকারি হাসপাতাল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!