ফেসবুকে হঠাৎ ‘পুলিশের’ ভূমিকায় মাউশি, বিরূপ প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের

‘সরকারকে খুশি করতে কেউ অতি উৎসাহে এই নির্দেশ দিয়েছেন’

ফেসবুক পোস্টে লাইক-শেয়ার-কমেন্ট দেওয়া নিয়ে কলেজ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা দপ্তরের নজিরবিহীন সতর্কতায় বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা মনে করছেন, এটা সরকারের নির্দেশ নাও হতে পারে। সরকারকে খুশি করতে শিক্ষা প্রশাসনের কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এই নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন।

এরই মধ্যে অবশ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক আগের কথা থেকে সরে এসে জানিয়েছেন, ফেসবুক নিয়ে ‘ওই নির্দেশনা শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য— ছাত্রদের জন্য নয়। সংবাদমাধ্যমে ভুল খবর এসেছে। যারা সরকারি কর্মচারী তাদের জন্য। ছাত্ররা তো আর সরকাারি কর্মচারী নয়।’

অথচ মাউশির নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা আদেশে শিক্ষার্থীদের কথাও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা থেকে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে মাউশির ওই নির্দেশনায়।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পোস্ট অনুমোদন করার সময় সরকারি নীতিমালা পরিপন্থী, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান, দপ্তর ও সংস্থার বিপক্ষে অবস্থানকারী কোনো পোস্ট অনুমোদন করবেন না। অন্যথায় পোস্টদাতা ও অ্যাডমিন উভয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।

এই আদেশ জারির পর কলেজ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কলেজ শিক্ষকরাও মনে করছেন, এই আদেশ অহেতুক।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘ভাবমূর্তির সংজ্ঞা কী— তা তো স্পষ্ট নয়। সরকারের কোনো কাজের সমালোচনা করা মানে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা নয়। সরকারের সমালোচনা করতে দেওয়া উচিত। এতে সরকার বুঝতে পারবে প্রকৃত অবস্থা কী। সমালোচনা বন্ধ করতে চিঠি দেওয়া কোনো ভালো কাজ নয়। ভিন্ন মতের চর্চা ও সুযোগ থাকতে হবে। আর কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বলার সুযোগ দিতে হবে।’

ড. কায়কোবাদের মতে, ‘এই ধরনের নির্দেশনা শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করবে। তারা কথা বলতে ভয় পাবে। কারণ সরকার কোনটাকে খারাপ হিসবে নেবে— তারা তো তা জানে না।’

তবে এটাকে ‘অতি উৎসাহীদের কাজ’ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার। তার মতে, এটা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। তিনি বলেন, ‘যেটা বাস্তবতা, যেটা অনিবার্য সেটাকে তো বাদ দেয়া যায় না। এটা কাউন্টার প্রোডাকটিভ, এটা ব্যাকফায়ার করতে বাধ্য। এটা কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নয়। এটা অস্বস্তি সৃষ্টি করবে।’

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম মো. ফারুক বলেন, ‘আমরা নতুন কোনো নির্দেশনা দেইনি। এটা মন্ত্রিপরিষদেরই নির্দেশনা— সরকারি কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের জন্য। আমরা সেটা নতুন করে জানিয়ে দিয়েছি।’

‘ভাবমূর্তির’ ব্যাখ্যা কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা আমরা দেখব কোনটা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, কোনটা করে না। যারা পোস্ট দেন তারাও খেয়াল রাখবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এটা যেমন খেয়াল করবেন, আমরাও নজর রাখবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!