ফেসবুকে মিলল খোঁজ, চট্টগ্রামে ৩ বছর পর হারানো ছেলেকে ফিরে পেলেন মা

এক দোকানের সামনেই তিন বছর

জাহিদের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা ছেনোয়ারা বেগম তাকে লালনপালন করে যাচ্ছিলেন অনেক কষ্ট সয়ে। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে এসে হঠাৎই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় জাহিদের।

মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়া অবস্থাতেই চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছেলে মনের খেয়ালে চলে যান ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। সেখানে গিয়ে এক দোকানের পাশেই পড়েছিলেন দীর্ঘ তিন বছর। পরিবারও দীর্ঘদিন তার কোনো খোঁজ না পেয়ে একপর্যায়ে আশা ছেড়ে দেন। বৃদ্ধা মা ছেনোয়ারার সেই সঙ্গতিও ছিল না যে, ছেলের খোঁজে এখানে-ওখানে যাবেন।

২৩ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন সেই জাহিদকেই অনেকটা ‘অলৌকিকভাবে’ ফিরে পেলেন তার মা। রোববার (১ আগস্ট) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছেলেকে ফেনী থেকে ফিরিয়ে তুলে দেওয়া হল তার পরিবারের হাতে। আর এর নেপথ্যে ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা ডিএসবির কর্মকর্তা সালাউদ্দিন লিটনের সহযোগিতা।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা সালাউদ্দিন লিটন বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে আমার এলাকায় এক দোকানের সামনে বসে থাকতো জাহিদ। প্রায় সময় আমার বাবা ও বাচ্চারা খাবার দিতো তাকে। মাঝে মধ্যে প্রতিবেশীরাও খাবার এনে দিতেন। আবার অনেকেই এসে পরিচয় জানতে চাইতো। কিন্তু কারও সঙ্গে সে কথা বলতো না।’

তিনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদে যখন বাড়ি যাই তখনও দেখি সে ওই স্থানেই বসা। কৌতূহল মেটাতে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, সে চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতে পারে কিনা। এরপরও নিশ্চুপ দেখে আমি তাকে চট্টগ্রামের ভাষায় সেখানকার সবকটি থানার নাম বলি। সাতকানিয়ার কথা বলতেই সে আঁৎকে ওঠে এবং কথা বলতে শুরু করে।’

সালাউদ্দিন লিটন বলেন, ‘আমি আগে সাতকানিয়ায় চাকরি করার সুবাদে বন্ধুদের মাধ্যমে ফেসবুকে তার ছবি প্রচার করি। পরে তার মামা আমার নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করেন। এরপর তাকে পরিপাটি করে স্বজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

জাহিদের বাড়ি সাতকানিয়ার চর খাগরিয়ায়। তার মা ছেনোয়ারা বেগম বলেন, আল্লাহর ফেরেশতা হয়ে তিনি (সালাউদ্দিন লিটন) আমার ছেলেকে বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে ফিরে পেয়ে নামাজ পড়ে দোয়া করেছি।’

বৃদ্ধা এই দুঃখিনী মা বলেন, ‘ছেলেটা এখন পুরোপুরি সুস্থ নয়। আগের কোনো ঘটনাই তার মনে নেই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!