ফেসবুকে পেজ খুলে কিডনি-লিভার কেনাবেচা, র‍্যাবের হাতে ধরা ৩ মানবপাচারকারী

কিডনি ডোনেট সেন্টারের নামে ফেসবুকে পেইজ খুলে গ্রামের সহজসরল মানুষকে কিডনি বিক্রিতে উদ্ধুদ্ধ করে ভারতে পাচার করা হয়— এমন একটি চক্রের মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। বৃহষ্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) নগরের খুলশী এলাকা থেকে চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব সেভেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে কিডনি ও লিভার পাচারকারী সদস্যদের মূলহোতা মোহাম্মদ আলী ডালিম, আতিকুর রহমান রনি ও মোহাম্মদ আলম হোসেন।

জানা গেছে, কিডনি ডোনেট সেন্টারসহ বিভিন্ন নামে ফেসবুকে পেইজ খুলে ডোনারদের নানাভাবে কিডনি ও লিভার ডোনেশনের ব্যাপারে প্রলোভন দেখানো হয়। ডোনার পাবার পর ঐ চক্রের সদস্যরাই তাদের পাসপোর্ট ও ইন্ডিয়ান ভিসা লাগানোর ব্যবস্থা করে দেন। এরপর ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে তাদের রক্ত, কিডনি ও লিভার পরীক্ষ করানো হয়। রিপোর্ট ঠিক থাকলে ঐ লোকদের তারা ইন্ডিয়াতে পাচার করে।

র‍্যাবের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম নামে এক অসহায় লোককে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় কিডনি বিক্রিতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়। তাকে ইন্ডিয়াতে পাচার করার জন্য পাসর্পোটে ভিসা লাগানোর কাজে সহযোগিতা করে পাচারকারীরা। উদ্দেশ্য কৌশলে ভারতে নিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেওয়া।

চট্টগ্রাম থেকে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর নামে ইন্ডিয়াতে মানবপাচার করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে এমন তথ্য ছিল র‍্যাবের হাতে। পাচারকারীরা খুলশী থানার ভাতীয় ভিসা অফিসের এক ভিকটিমকে পাচারের জন্য ভিসা ঠিক করে দিতে গিয়েছিল।

ভারতে ডোনারদের সাথে রোগীদের রক্ত, কিডনি ও লিভার ক্রস ম্যাস করিয়ে থাকেন। শুধু কিডনির ও লিভার এর জন্য চক্রটি রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু কিডনি দাতা বা লিভার দাতাকে দেন মাত্র ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা।

র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নেয়াজ মোহাম্মদ চপল বলেন, ভারতে অবস্থানরত শাহিন ওই দেশের হাসপাতালে ভিকটিমদের বিভিন্ন অঙ্গের পূনরায় পরীক্ষা করানোর পর তাদের কাছ থেকে কিডনি ও লিভার সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। এই চক্রটি এই পর্যন্ত প্রায় ৩০-৪০ জন লোককে প্রলুব্ধ করে অবৈধভাবে কিডনি ও লিভার দেবার জন্য ভারতে পাচার করেছে।

এদিকে, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ অনুযায়ী কারো অঙ্গহানী করা বা বিকলাঙ্গ করা গুরুতর অপরাধ। উক্ত পাচারকারী দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ এ অপরাধ করে যাচ্ছিল। কিডনি ও লিভারদাতারা পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে গেলেও পাচারকারী দলটি তাদের নূন্যতম সাহায্য ও সহযোগিতা করত না। কিডনি প্রদানের পর কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেনে বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এমনও নজির রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনের মামলা রুজু করা হয়েছে।

এএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!